‘হাত-পা ভেঙে দেব’, সরকারি কর্মকর্তাকে আ. লীগ নেতা

Looks like you've blocked notifications!
খুলনা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র : ফাইল ছবি

খুলনার এক সরকারি কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সহকারী পরিচালক মো. মসিউর রহমানকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে গালিগালাজ করে হুমকি দিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এস আব্দুল হক।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানায় গত ১১ সেপ্টেম্বর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অন্তর্ভূক্ত করেন ওই সরকারি কর্মকর্তা। দৌলতপুর থানা জিডি গ্রহণ করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন এই কর্মকর্তাসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জিডিতে বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর এস এম আব্দুল হক ও তাঁর ছেলে শেখ রফিকুল ইসলাম এসে বলেন, খামারে উৎপাদিত সব হাঁসের বাচ্চা তাদের দিতে হবে। জবাবে কর্মকর্তা মসিউর রহমান জানান, চাহিদার তুলনায় খামারে উৎপাদন কম। এ ছাড়া খামারের বাচ্চা নিতে হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সুপারিশ জমা দিতে হবে। এ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে এস এম আব্দুল হক ও তাঁর ছেলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং বলেন, খামারে সব হাঁসের বাচ্চা বুকিং ছাড়াই তাদের দিতে হবে। কোনো সুপারিশের ধার তাঁরা ধারেন না।  

চিৎকার শুনে কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে আসেন। জিডিতে আরো বলা হয়, একপর্যায়ে এস এম আব্দুল হক খামারের সহকারী পরিচালককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘চার-পাঁচশ লোক এনে তোর হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। তুই শালা কিভাবে চাকরি করিস দেখে নেব।’

জিডিতে সরকারি এ কর্মকর্তা আরো উল্লেখ করেন, কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। তিনি কর্মকর্তাদের ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালি দেন।

তবে এ ব্যাপারে সাবেক কাউন্সিলর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম আব্দুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘সহকারী পরিচালক মসিউর রহমান দুর্নীতিবাজ, জামায়াত–শিবিরের লোক। সে বঙ্গবন্ধুর ওফাত দিবস বিশ্বাস করে না। ১৫ আগস্টের চাঁদা চাইতে গেলে মেয়র খালেক সাহেব চাঁদা দিতে মানা করেছে বলে জানায়।’

তবে আওয়ামী লীগ নেতা ঘটনার দিন ওই কার্যালয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। হাঁস প্রজনন খামারের সহকারী পরিচালক থানায় অভিযোগ করেছেন তাও তিনি জানেন বলে জানান।

এস এম আব্দুল হক আরো বলেন, ‘সরকারি এই কার্যালয়টি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে সহকারী পরিচালকের অবৈধ কাজকর্ম এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছি।’

মশিউর রহমান রাতের আঁধারে হাঁসের বাচ্চা পাচার করেন বলেও অভিযোগ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোস্তাক আহমদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করলে তিনি সাধারণ ডায়েরির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তিনি দু’জনকে ডেকে ঘটনা শুনে একটা মীমাংসা করে দেবেন বলে জানান। তবে সরকারি কার্যালয়ে গিয়ে এভাবে কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া ও গালিগালাজ করা ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমানের ফোনে কল দিয়ে এবং বার্তা পাঠিয়েও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সহকারী পরিচালক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। থানায় মামলা করার জন্য ১২ জনের স্বাক্ষরসহ অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু মামলা না নিয়ে শুধু জিডি নেওয়া হয়েছে। এরপর দীর্ঘ দিন হয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় খুলনা আঞ্চলিক হাঁস খামারের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।