সুন্দরবনে হচ্ছে আরো চারটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র

Looks like you've blocked notifications!
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের একটি দৃশ্য। ছবি : এনটিভি

সুন্দরবনে ইকোট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) ক্রমবর্ধমান ভিড় সামলাতে নতুন করে আরো চারটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনের তিনটি পর্যটন এলাকাকে ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট ঘোষণা করার পর থেকে এই ম্যানগ্রোভ বনে প্রতি বছরই দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুন্দরবন দেখতে আসে দেশি-বিদেশি প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯০ প্রতিবেশপর্যটক। সেখানে গত অর্থবছরে সুন্দরবনে প্রতিবেশপর্যটক বা ইকোট্যুরিস্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৯৬৯ জন। সুন্দরবনে ক্রমবর্ধমান ইকোট্যুরিজমকে আরো বিকশিত করতে নতুন করে আরো চারটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।

নতুন এই চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এবং পশ্চিম সুন্দরবনের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জে। এই চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণে বন বিভাগের ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। নতুন এই চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে হরিণ ও কুমিরসহ বন্যপ্রাণীর মুক্ত বিচরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকছে ইকো ট্যুরিস্টদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের একটি দৃশ্য। ছবি : এনটিভি

বন বিভাগ সূত্র জানায়, জীববৈচিত্র্যের আধার পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন। যা দেশের মোট বনাঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন হচ্ছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। পূর্ব সুন্দরবনের কটকার বাদামতলা সমুদ্র সৈকত থেকে দেখা যায় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়। সুন্দরবন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার তার রূপ বদলায়। সুন্দরবনের লবণাক্তভোজী প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরীসহ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়া হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, কচ্ছপ ও কিং কোবরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। রয়েছে ৩১৫ প্রজাতির পাখি। সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার জলভাগের নদ-নদীতে রয়েছে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার। এসব কারণে সুন্দরবনের প্রতি পর্যটকদের রয়েছে বাড়তি আগ্রহ।

জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্য কটকা-কচিখালী, নীলকমল দক্ষিণ অভয়ারণ্য ও পশ্চিম অভয়ারণ্যের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর বনকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, জামতলা, টাইগার পয়েন্ট, বাদামতলা সমুদ্র সৈকত, কচিখালী, দুবলা শুঁটকি পল্লী, দোবেকী, কলাগাছিয়া, মান্দারবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট  ও নীলকমল পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের  সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে শুধু পর্যটন খাত থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় হয় প্রায় দুই কোটি টাকা।

২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন এই চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে হরিণ ও কুমিরসহ বন্যপ্রাণীর মুক্ত বিচরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকছে ইকোট্যুরিস্টদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যে নদী থেকে ইকোটুরিস্টদের এসব পর্যটন কেন্দ্রে উঠতে আধুনিক গ্যাংওয়ে বা জেটি, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চিরসবুজ রূপ দেখতে ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত উডেন ট্রেইল ও বিশ্রামাগারসহ আধুনিক ওয়াশরুম নির্মাণ করা হবে। এতে সুন্দরবনে আগত দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের সুযোগ-সুবিধা বহুলাংশে বাড়বে।

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের একটি দৃশ্য। ছবি : এনটিভি

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পৃথিবীর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বন হচ্ছে হ্যারিটেজ সাইট। সুন্দরবন তার মধ্যে একটি। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। এই অবস্থায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের অধিকতর সুরক্ষা দিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশবান্ধব পরিকল্পিত ইকোট্যুরিজমে গুরুত্ব দিচ্ছে বন বিভাগ। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ কমাতে ও পরিকল্পিত ইকোট্যুরিজমের জন্য পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এবং পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জে নতুন এই চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র করছে বন বিভাগ।