সব হারিয়ে নির্বাক নূর হোসেন

Looks like you've blocked notifications!
পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমভি মোস্তফা লঞ্চ থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ দেখার পর নির্বাক ডিবি পুলিশের কনস্টেবল নূর হোসেন। গতকাল রোববার রাতে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার দিকে যাওয়ার পথে একটি সারবাহী কার্গোর ধাক্কায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। ছবি : এনটিভি

পেশায় একজন পুলিশ সদস্য। দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিবেশে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করাই তাঁর প্রধান দায়িত্ব। পরিবারকে ঠিকমতো সময়ও দিতে পারেননি। আজ পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে পাগলের মতো এদিক-ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। একবার যাচ্ছেন লঞ্চডুবিতে উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর কাছে, আরেকবার যাচ্ছেন যেখানে লঞ্চ উদ্ধার করা হচ্ছে সেখানে। এখন তিনি পুলিশ সদস্য নন, উষ্ণ-উৎসবের বাবা, রুমা আক্তারের স্বামী।

বলছি গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মো. নূর হোসেনের কথা। নানি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিলেন তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার। কিন্তু দেশের এ পরিস্থিতিতে কর্মস্থল মানিকগঞ্জ থেকে ছুটি নেওয়া অসম্ভব ছিল নূর হোসেনের জন্য। উপায় না পেয়ে স্ত্রী রুমা, সাত বছরের ছেলে উৎসব ও তিন মাসের মেয়ে উষ্ণকে রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য উঠিয়ে দিয়েছিলেন এমভি মোস্তফা লঞ্চে। তখনও তিনি জানতেন না, কী ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।

একটি সারবাহী কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধার করা লাশের মধ্যে নূর হোসেন খুঁজে পান স্ত্রী রুমা আর ছেলে উৎসবের লাশ, উষ্ণের খোঁজ মিলছিল না। পরে গত রাতে লঞ্চটি উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে ৬৯তম লাশটি চিনতে পারেন নূর হোসেন, এ যে তাঁর উষ্ণ। পুরো পরিবারকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। আর তাঁর আচরণ দেখে আশপাশের মানুষ শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। নূর হোসেনকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।

মেয়েকে নিয়ে ঝাঁপ দিলেন মিলন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মিলন। পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। পেশাগত কারণে বাস করেন রাজধানীতে। তাঁর দাদির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির দিকে রওনা হন তিনি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লিপি খাতুন আর দুই বছরের মেয়ে নীলিমা।

কার্গোটি যখন তাঁদের এমভি মোস্তফা লঞ্চকে ধাক্কা দিল, তখন নীলিমাকে কোলে নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। এর পর একটি ট্রলার এসে উদ্ধার করে তাঁদের দুজনকে। ভর্তি করা হয় মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন সুস্থ বাবা-মেয়ে।

কিন্তু স্ত্রী লিপি এখনো নিখোঁজ। উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে নেই তাঁর নীলিমার মা। পুরো ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছেন মিলন।