নেতার কথা না শোনায় হত্যা!

Looks like you've blocked notifications!
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহিদ মিয়া। ছবি : সংগৃহীত

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ওয়াহিদ মিয়া (৪৫) নামের এক কৃষক হত্যার শিকার হয়েছে। দলীয় অন্তর্কোন্দলের ফলে ওই খুন হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ওয়াহিদ গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ও আট ভাই (ফরাস) পক্ষের মধ্যে প্রায় তিন যুগ ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিভিন্ন সময়ের বিরোধের ফলে এ যাবৎ উভয়পক্ষের মধ্যে পাঁচটি হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। সে সব মামলায় একাধিক আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ও দেন আদালত।

নিহত ওয়াহিদ ছিলেন গিয়াস উদ্দিন পক্ষের একজন সদস্য। তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিলেন বলেও জানায় পুলিশ।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন পক্ষের আগে নিহত ওয়াহিদ প্রতিপক্ষ আট ভাই পক্ষের একজন সদস্য ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি দলবদল করেন। দীর্ঘ দিন কোনো কোন্দল না থাকায় এর ভেতর এলাকার পরিস্থিতি শান্ত ছিল। কিন্তু গতকাল আচমকা ওয়াহিদ খুন হওয়ায় সে পরিস্থিতি বদলে গেছে।

নিহতের পরিবারের দাবি, সম্প্রতি ওয়াহিদ নিজ পক্ষের নেতা গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর সমর্থকদের কথা না শোনার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানা যায়, গতকাল বিকেলে ওয়াহিদ স্থানীয় আউশকান্দি বাজার থেকে দাউদপুর গ্রামের রোমান মিয়ার অটোরিকশায় করে বোয়ালজুর গ্রামে নিজ বাড়ির কাছে রাস্তার মোড়ে নামেন। নামার পর ২০ থেকে ২৫ জন লোক তাঁকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির উঠানে নিয়ে যান। এর প্রায় ২০ মিনিট পর হাত-পা ভাঙা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় ওয়াহিদকে রাস্তায় ফেলে যান তারা। পরে ওয়াহিদকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামের বাড়িতে নিহত ওয়াহিদ মিয়ার স্বজনদের আহাজারি। ছবি : এনটিভি

মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে ওয়াহিদের স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে শুরু করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ইনাতগঞ্জ ফাড়ির ইনচার্জ শামছ উদ্দিন ও পরিদর্শক (তদন্ত)  নুরুল ইসলামও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।

নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে দাউদপুর গ্রামের মুহিবুর রহমান জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্থানীয় হাওর থেকে কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে ২০ থেকে ২৫ জন লোককে তিনি বোয়ালজুর গ্রামে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ওয়াহিদ সিএনজিচালিত আটোরিকশা থেকে নামামাত্রই ওই লোকগুলো তাঁকে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ধরে নিয়ে যান। প্রায় ২০ মিনিট পর রক্তাক্ত অবস্থায় তারা ওয়াহিদকে বাইরে ফেলে দিয়ে যান।  

ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানো হয়।

এদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, গিয়াস উদ্দিন বোয়ালজুরের ওই বাড়িতে বসবাস করেন না। তিনি অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। তাঁর ভাই শাহীন মিয়া বসবাস করেন লন্ডনে। ওই বাড়িটিতে মাঝে মধ্যে তাঁদের কোনো নিকটাত্মীয়রা এসে থাকেন।

এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বাজকাশারা এলাকায় বসবাস করছেন। বোয়ালজুরের বাড়িতে তাঁদের পরিবারের কোনো লোকজন থাকেন না। ওয়াহিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে, এ ঘটনায় তাঁরা কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিজেদের গ্রুপিং ও গ্রুপ লিডার গিয়াস উদ্দিনের কথা না শোনার কারণেই ওয়াহিদ মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।