‘নাতিন জামাইও বিএনপির মতো দাবি করে না’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তির যে দাবি তাঁর দল থেকে করা হয়েছে তা অর্থহীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মন্ত্রী বলেছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনার বয়সের বিবেচনায় সাজা অর্ধেক কইরা দিছে। কোর্টের যে সাজা, কোনো সরকারের মাফ করার ক্ষমতা আছে? তাহলে? সেই সাজা মাফ কইরা দিয়া তাদের আমরা রাজনীতিতে আনব! নাতিন জামাইও তো এ রকম দাবি করে না। হাসো ক্যা? নাতিন জামাইও তো এই ধরনের দাবি করে না।’
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাগুরা জেলা পরিষদ চত্বরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির উদ্দেশে এলজিআরডিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এ রকমও দুর্দিন গেছে, আজকে জেলা প্রশাসক আমাদের মঞ্চে উপস্থিত। এ রকম একটা সময় ছিল, এ রকম একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ছিলাম। যে আমরা একটা জেলা প্রশাসকের বারান্দা পর্যন্ত যাইতে পারি নাই। এখন উনারা উনাদের দুর্বলতার কারণে রাস্তার মোড়ে দাঁড়াইতে পারেন না। সেটা নিয়ে আমাদের দোষ দিচ্ছে। শক্তি সঞ্চয় করো। যদি আন্দোলন করতে চাও, আন্দোলনের শক্তি নাও। আমাদের তো অত্যাচার-অনাচার করছ, আওয়ামী লীগের লোকজনকে তো রাস্তা থেকে উঠায়া দিতে পারো নাই। আমাদের আক্রমণ করছ, আমরা রাস্তায় শুয়ে পড়ছি। তোমাদের মতো তো কাপড়-চোপড় খুইলা দৌঁড় মারি নাই। ছবি আছে। তোমাদের গ্রুপ কাপড়-চোপড় খুইলা মারল দৌঁড়।’
সারা দেশে উন্নয়ন মেলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কালকে সারা দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন মেলা করছে। আপনাদের এখানে কি অবস্থা হইছে আমি জানি না। আমি ফরিদপুর আমার জেলায় উপস্থিত ছিলাম। কম করে হলেও দেড় লক্ষ লোক উপস্থিত ছিল। আমরা মেলার মাঠে জায়গা দিতে পারি নাই। সাত-আটটা দোকান ভাইঙ্গা, মিটিংয়ের পরিধি বৃদ্ধি করতে হইছে। এই সাড়া দেখে তো তারা মনে করতেছে, ভোটের দিকে না চাইয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব একটা সিলভারের প্লেট নিয়ে যাবে। যাইয়া বলবে, প্রধানমন্ত্রীর অংশটা আমাদের হাতে তুইলা দাও। তুমি কি সেই সময়ে আছ? এটা কি দুনিয়ার কোনো পাগলে বলবে? তাদের দাবি হইলো এখন এই ধরনের। এখন এই ধরনের দাবি আমরা কীভাবে পূরণ করব? আমাদেরও তো দুই বছর রাস্তায় রাখছিলা তোমরা। আমরা কি তোমাদের মতো ম্যাও ম্যাও করছি? হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করছি? আমরা কইছি অচল করে দিব বাংলাদেশ। শক্তি থাকে আসো, রাস্তায় মোকাবিলা কর। দেখি তোমাদের শক্তি কতখানি, আওয়ামী লীগের শক্তি কতখানি। ’
অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচনী জোট বা মোর্চা করবে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেইটা তো এখনো বলতে পারতেছি না। কোন পরিস্থিতি হয়, বিএনপি কী করে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করতেছে। অ্যাডভান্স কিছু বলা যাবে না।’
নির্বাচনী সরকার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সেটা তো আমি বলতে পারব না। এটা প্রাইম মিনিস্টারের পরিপূর্ণ এখতিয়ার এবং নির্বাচনকালীন সরকার বলেও কোনো বিধান, সংবিধানে নাই। উনি এটারে নিরপেক্ষ রূপ দেওয়ার জন্য, হয়তো কিছু পরিবর্তন কইরা, সার্বিক একটা মন্ত্রণালয়, গ্রহণযোগ্য একটা..।’
বিএনপির দাবি নিয়ে এলজিআরডিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কি কোর্টরে নির্দেশ দিতে পারে যে তাঁকে ছাইড়া দাও। বিএনপি যে দাবিটা তুলছে, দাবিটা কি যৌক্তিক? কথা কন। কোর্ট যে সিদ্ধান্ত দিছে, এটা তো তাঁর উচ্চ কোর্টে আপিল করলে এই একটা পথ আছে। আরেকটা পথ আছে, নিঃশর্তভাবে তাঁর দোষ স্বীকার কইরা, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তো দুইটার একটাও করবেন না। আমরা যাইয়া তাঁর সব মাফ-টাফ কইরা, বলব যে, আসো…হাতে পায়ে টাইনা নিয়ে আসব। বাংলাদেশে কি দলের অভাব আছে? উনারা যদি না আসেন, নির্বাচন বর্জন হবে এ রকম আশঙ্কা কি আমাদের কারো মনে আছে? তাইলে খালি বিএনপি-বিএনপি করলে আমাদের লাভটা কি হবে কন। তাদের দল যদি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আগায় না আসে আওয়ামী লীগের কি ঠ্যাকাটা পড়ছে? কও তুমি আমারে কও যে এই ঠ্যাকাটা পড়ছে। তাঁরা না আসলে আরো ৫৪টা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তারা যদি না করে, বলো আমি কী করলে তাদের নির্বাচনে আনা যাবে? শিখাই দাও, কইয়া ফালাই।’
মাগুরা জেলা পরিষদ চত্বরে আজ প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। পরে শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম চত্বরে জেলা পরিষদ আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী যোগ দেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পংকজ কুমার কুণ্ডুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ টি এম আব্দুল ওয়াহাব, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০০ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও টাকা, ১০০ মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে সনদ ও শিক্ষা উপবৃত্তি, দুঃস্থ ও কর্মক্ষম ৮৭ জন নারীকে সেলাই মেশিন ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হয়।