খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা শুরু হবে অন্তত দুই সপ্তাহ পর
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা শুরু হতে আরো অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এই সময়টাতে তাঁর প্রাথমিক পরীক্ষা করবেন চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার কেবিনে যান মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বোর্ডের সদস্য হাসপাতালের রিউম্যাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক।
ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা শুরুর আগে আমাদের দুই সপ্তাহ প্রাথমিক পরীক্ষা করা লাগবে। আমরা এরই মাঝে কিছু পরীক্ষা দিয়েছি। সেগুলোর রিপোর্ট আসার পর মূল চিকিৎসা শুরু হবে। তবে ডায়াবেটিস না কমলে তাঁর মূল চিকিৎসা শুরু করা যাবে না। তাই দুই সপ্তাহ পরই যে চিকিৎসা শুরু হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ এলে তখন মূল চিকিৎসা শুরু হবে।’
আতিকুল হক আরো বলেন, ‘তবে খালেদা জিয়াকে কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এক্ষেত্রে রোগীরও সহযোগিতা লাগবে। কারণ রোগীর সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না।’
ফিজিওথেরাপির বিষয়ে জনতে চাইলে আতিকুল হক বলেন, ‘কাল থেকে খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি শুরু করা হবে।’
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরী।
ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া ৩০ বছর ধরে বাতের সমস্যায় ভুগছেন। যার ফলে উনার বাঁ হাত একটু বাঁকা হয়ে গেছে। মূলত তাঁর গেটে বাতটা বেড়ে যাওয়ার ফলে এসব সমস্যা বাড়ছে। বাতের কারণে খালেদা জিয়ার যেসব ওষুধ যে পরিমাণে খাওয়া দরকার ছিল, ঠিক পরিমাণে তা খাওয়া হয়নি। যার ফলে এ সমস্যা শুরু হয়েছে। এজন্য তাঁর বাঁ হাত অবশ ও বাঁকা হয়ে গেছে।’
ডা. জলিল আরো বলেন, খালেদা জিয়ার প্রধান সমস্যা হলো গেটে বাত, কোমরে ব্যথা, মাজায় ব্যথা ও হাতে ব্যথা। এ ছাড়া তাঁর বাঁ হাত বাঁকা হয়ে গেছে কিছুটা। এ ছাড়া তিনি ডায়বেটিস, অ্যাজমাসহ নানান রোগে ভুগছেন। তাঁর গিরায় গিরায় ব্যথা আছে, হাই প্রেসারের সমস্যা আছে। হাঁটু প্রতিস্থাপন করার কারণে হাঁটুতেও সমস্যা আছে। সেটিও কিছুটা বেড়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে যখন কারাগারে দেখতে গিয়েছি তখন উনাকে বলেছি, একটা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য। আর সেজন্য আমরা তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বলেছি। তখন তাঁকে বলেছিলাম, ভালো চিকিৎসা চাইলে আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।
এখনো মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা একসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেখেননি। কাল রাত ১০টার দিকে ডা. আতিকুল হক তাঁকে দেখেছেন। চিকিৎসকরা যখন যে বিষয়ে দেখছেন, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানান ডা. জলিল।
ডা. আবদুল জলিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. সৈয়দ আতিকুল হক ও ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ। এ ছাড়া ছিলেন ডা. তানজিমা, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন।
গত শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোববার হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁকে দেখবে। এরপর তারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।’ এর মধ্যে খালেদা জিয়ার আগের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আগের চিকিৎসাই চালিয়ে যাওয়ার কথা তিনি জানান।