ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন সোমবার

Looks like you've blocked notifications!
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। ছবি : ইউএনবি

উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না করে সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে সরকারের তিন মন্ত্রী তাঁদের প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছেন বলে মন্তব্য করেছে সম্পাদক পরিষদ। তারা এই আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে আগামী সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। লিখিত বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদের সাতটি দাবি উপস্থাপন করেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, স্বাধীন গণমাধ্যমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলো। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকারের তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন সম্পাদক পরিষদের নেতারা।

বিষয়গুলো মন্ত্রিসভার ১৩ অক্টোবরের বৈঠকে উত্থাপন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছিলেন ওই তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা। তাদের অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করে আইনটি পাস করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিও অনুমোদন দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদকে তিনজন মন্ত্রী যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা মনে করি এটি সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। সাংবাদিকদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো, বিশেষত সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা বিষয়ক ধারাগুলোতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়াই, আইনটি সংসদে পাস করা হয়। বরং শেষ মুহূর্তে এমন কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে সংবাদপত্রের কার্যালয় এবং সংবাদ প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে প্রবেশ করা, তল্লাশি করা, বন্ধ করে দেওয়া, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক জব্দ করা, এমনকি পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা আরো বেড়েছে।’

এ সময় সম্পাদক পরিষদের নেতারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে তাঁরা সমর্থন করেন। তবে স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে বিশেষ ধারাগুলো প্রধান প্রতিবন্ধক, সেই ধারাগুলো সংশোধনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তাঁরা।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা বলতে চাই যে, এই আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে আমরা, আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। সেগুলো খুবই, মানে সাংবাদিকদের জন্য খুবই সংকটের সৃষ্টি করবে। এটা খুব একটা লাইটলি নেওয়ার কোনো ব্যাপার না। তাই আমরা বারবার অনুরোধ করছি যে, আমরা যে ধারাগুলো সুনির্দিষ্ট করেছি, আমূল অ্যামেন্ডমেন্ট আমরা চাই। অ্যামেন্ডমেন্টের একটা সম্ভাবনা আছে, আমাদের এই পার্লামেন্টে।’

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ধরনের আইন হয়েছিল। কিন্তু তাদের হাইকোর্ট সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আইনটি বাতিল করে দেন। বাংলাদেশেও এই ধরনের ‘কালাকানুন’ সুফল বয়ে আনবে না। তাই শিগগিরই আইনটি পরিবর্তন হবে বলেও আশাবাদী সম্পাদক পরিষদের নেতারা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ'র আপত্তি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী। তাঁদের উদ্বেগগুলো নিয়ে ৩ অক্টোবরের পর মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। বৈঠকে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেখানে সম্পাদকরা আইনটির নয়টি ধারা নিয়ে তাঁদের আপত্তি লিখিত আকারে তুলে ধরেন।

পরে আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘যেহেতু পার্লামেন্টে আইনটা পাস হয়ে গেছে সেহেতু আমি এসব বক্তব্য কেবিনেট মিটিং হবে সেখানে উপস্থাপন করব। এডিটরস কাউন্সিলের যে আপত্তিগুলো সেগুলো আমি তুলে ধরব।’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, ‘গণমাধ্যমের কর্মীরা কোনো আইন দ্বারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা আমাদেরও উদ্বেগ। ভিন্ন কিছু মত থাকলেও, কিছু আপত্তি, উদ্বেগ থাকলেও আমরা আলোচনায় বসতে সক্ষম হয়েছি।’

কিন্তু সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যে সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে গত ৮ অক্টোবর স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর যেকোনো বিল আইন হিসেবে গণ্য হয়। এখন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার।