বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, নেই বিকল্পধারা

সরকার বিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়তে গত কয়েক মাসের চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছে। গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ঘোষণা করা হয়েছে নতুন জোটের। নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এতে যোগ দিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপি। রয়েছে ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে নতুন জোটে নেই সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় জোটের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সংসদ বাতিল করে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইভিএম ব্যবহার না করা, রাজনৈতিক মামলা স্থগিত করা, ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করা। আর প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির বলে ইতিবাচক রাজনীতির প্রতিশ্রুতিসহ ঘোষণা করা হয় ১১টি লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমরা কোনো হুমকি দিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। আপনি কোনো হুমকি দিয়েন না। এত কোটি কোটি জনগণ আছে আমরা কিসের ভয় করব?
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবে ভয়ে থেকো না। আমরাও কোনো হুমকি দিয়ে কথা বলতে চাই না। জনগণ আমাদের সাথে আছে। আমরা কাউকে ভয় করি না। আসুন আমরা রাস্তায় নামি। আমাদের দাবি ও লক্ষ্যগুলো জণসাধারণকে বলতে থাকি।
নতুন জোটের আহ্বায়ক বলেন, বাঙালি জাতি অন্যায়ের সাথে আপস করে না। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি। এটা বাঙালির বৈশিষ্ট। এটা আমারও বৈশিষ্ট্য। জীবন তো একটাই। মৃত্যু যদি লেখা থাকে তাহলে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাকে যদি কিছু নাও দিয়ে থাকে একটা জিনিস দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে কারো কাছে মাথা নত না করা, কোনো স্বৈরশাসনকে ভয় না করা। চলেন, আমাদের দাবিগুলো আমরা দেশের মালিক জনগণের কাছে গিয়ে বলি। সারা গ্রাম চষে বেড়াবো আমরা। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাব।
সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল বলেন, এখানে যে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আছেন তাদের দাবি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমান যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, এখানে কোনো বৈধ সরকার গঠন করতে হলে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হতে হবে।
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের ডাক কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, এটা জাতীয় স্বার্থে। কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা কোটি মানুষের উদ্যোগ। এই জোটে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দলও আছে। আমি অন্যদেরকেও আশা করি এই ঐক্যে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি
সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে এই লড়াই শুরু হলো নতুন আঙ্গিকে। আমরা বিশ্বাস করি এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি মিলবে। আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এবং আমরা শপথ নিয়েছি গণতন্ত্রের অধিকারগুলোকে আদায় করার পরেই আমরা ঘরে ফিরব।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নব সূচনার দিন এই জন্য বলছি, আজকের যে দাবি, সে দাবি গণতন্ত্রের জন্য। ১৯৭১ সালে যে জাতি যুদ্ধ করেছিল, যে জাতি বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিল। সেই জাতি আজ গণতন্ত্রবিহীন।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘সেই জাতি আজকে প্রতিনিয়িত স্বৈরাচারের অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সেই জাতি আজ মুক্তির জন্য, আবার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য এক হয়েছে। এটা গণআন্দোলনের এক নব সূচনা।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘এই সরকার আজকে জনগণের অধিকার হরণ করেছে, বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, ভোটের অধিকার হরণ করেছে, নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক শান্তিময় বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য আমাদের সেই সময় যে দল নেতৃত্বে ছিল তাদের হাতে সেই গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে হাজারো মানুষ কারারুদ্ধ, আজকে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে, গুম হয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ মিথ্যা মামলার শিকার। তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ আহাজারি করে। শিশুরা তাদের পিতার ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। ঠিক মানুষ এই অবস্থান থেকে ফিরতে চাই। মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে চাই। ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আসুন, আমরা আমাদের লক্ষ্য এবং দাবি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। আসুন আমরা সবাই এই সংগ্রামে শামিল হই।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণার পাশাপাশি আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমানত শাহ-বদর শাহর পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম, হজরত শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেট, হজরত শাহ মখদুমের পুণ্যভূমি রাজশাহীসহ সারা বাংলাদেশের থানা, উপজেলা, নির্বাচনী এলাকা, জেলা, নগর-মহানগর আমরা চষে বেড়াব। ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। ছবি : স্টার মেইল
আবদুর রব বলেন, আমাদের এ কর্মসূচি আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে পালন করব। একই সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিও চলতে থাকবে। অনতিবিলম্বে আমরা আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে, শিল্পী-কবি-সাহিত্যিকদের সাথে মতবিনিময় করব।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে আমরা খুব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। গুম ও খুন হচ্ছে, ব্যাংক লুট হচ্ছে, স্বর্ণ লুট হচ্ছে, শেয়ার লুট, কয়লা লুট এবং পাথর লুট হচ্ছে। এই সব কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। ঠিক এমন একটি সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে জাতির সামনে একটা বিরাট প্রশ্ন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণ একটি পরিবর্তন চায়। এটা কি ধরনের হবে? এই যে একটা সংকটের দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছিল, সেই সময়ে আশার আলো হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। এদেশের সবার দাবি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। সেটা হতে হলে ঐক্যফ্রন্ট যে দাবিগুলোর কথা বলেছে তা পূরণ না হলে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সুতরাং শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ছবি : স্টার মেইল
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকের আন্দোলন মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। এই স্বৈরাচারী সরকারকে পরাজিত করতে হলে একটি মাত্র অস্ত্র আমাদের আছে, সেটা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ঐক্যের মাধ্যমে এই সরকারকে বাধ্য করা হবে যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়। সাধারণ মানুষ ক্ষমতার পরিবর্তন চায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি : স্টার মেইল
অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণ পরিবর্তন চায়। প্রতিটি জায়গায়, পাড়া-মহল্লায় পরিবর্তন চায়। কিসের জন্য চায়? কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবে, সুলভে চিকিৎসা কিংবা বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে। স্বৈরশাসন এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এই ঐক্যফ্রন্টের পথচলা। সবার সহযোগিতায় আমাদের সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। একটা কথা জনগণকে নিশ্চিত করতে চাই, আর কেউ হোক, আমি একলা হলেও এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় যা আছে:
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনের সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবি : স্টার মেইল
১১ দফা লক্ষ্যে যা আছে :
১. মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানকল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।
২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা।
৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।
৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা, দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমন।
৫. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুব সমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা।
৬. সকল নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিধান করা, কৃষক শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা , বাসস্থান, ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।
৮. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন, ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা।
৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া।
১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব- কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’, এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১১. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণসমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, প্রযুক্তি ও সমর সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।