জাফরুল্লাহর বক্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসত্য’

Looks like you've blocked notifications!

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাসদরের ওই প্রতিবাদ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।  সেখানে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান নিয়ে জাফরুল্লাহর বক্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসত্য’।

গত ৯ অক্টোবর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে সেনাপ্রধান নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় আইএসপিআর। এরপর ১৩ অক্টোবর রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সেই সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে সেনাসদর থেকে বলা হয়েছে, ‘ডা. জাফরুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে পুনরায় কিছু বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

আইএসপিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিষয়টি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

গত ৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ রাত ১০টায় ‘সময়’ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত টকশো ‘সম্পাদকীয়’তে অংশগ্রহণকারী আলোচকদের একজন জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোচনার এক পর্যায়ে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় ইতিহাসের নৃশংসতম, জঘন্য ও ঘৃন্য গ্রেনেড হামলার ঘটনার সহিত বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে গিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে কল্পনা প্রসূত ও বানোয়াট কিছু অসত্য তথ্য পরিবেশন করেন। সেনা সদর হতে পরের দিন ‘সময়’ টিভিতে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হলে সময় টিভি কর্তৃপক্ষ অতি গুরুত্ব সহকারে ওই দিন অর্থাৎ ১০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ‘সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে উক্ত প্রতিবাদলিপি প্রচার করেন। জনাব ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য ও সেনা সদরের প্রতিবাদ নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো-

‘গতকাল সময় টেলিভিশন-এ রাত ১০ ঘটিকায় প্রচারিত টকশো ‘সম্পাদকীয়’ চলাকালীন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন-

‘………….. দেখেন আরজেএস গ্রেনেড, আমি জানি না সময়টি মিলে কি না – আমাদের বর্তমান চিফ অব আর্মি আজিজ সাহেব চট্টগ্রামের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, জিওসি ছিলেন, কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তাঁর ওখান থেকে একটা ব্যাপক সংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাগুলি চুরি হয়ে গেছিল, হারিয়ে গেছিল, বিক্রি হয়ে গেছিল এবং এজন্য একটা কোর্ট মার্শাল ও হয়েছিল, আজিজের নামে, জেনারেল আজিজের নামে কোর্ট মার্শালও হয়েছিল। আজকে উনি…………..,কিন্তু  উনার কেন এসেছে, উনি হলেন ওভার অল, উনি নিশ্চয়ই এখন তো ওখান থেকে এবং আমরা আরো দেখছি মিরপুরে সম্প্রতি কয়েক বাক্স পুকুরের মধ্যে পাওয়া গেছে, এ সবগুলি আমাদের ব্যর্থতা …………..’

বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কারণ বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকুরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ হতে জুন ২০১১ পর্যমত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, জুন ২০১১ হতে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকায় মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং মে ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।

চাকরিরত একজন সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত যা সেনাবাহিনীর প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান।

ডা. জাফরুল্লাহর উপরোক্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবলমাত্র সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং তা সেনাবাহিনীপ্রধানের পদকে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। যা প্রকারান্তরে চাকরিরত সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতি বাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া এরূপ অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে যা অনাকাংক্ষিত।’

গত ১৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জনাব ডা, জাফরুল্লাহ ইতিপূর্বে ‘সময়’ টেলিভিশনের টকশোতে তার প্রদত্ত বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ‘অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য উল্লেখ এবং ভুল শব্দ চয়ন ও শব্দ বিভ্রাট হয়েছিল মর্মে উল্লেখ করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার  প্রদত্ত বক্তব্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন পোর্টালসহ প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে পরের দিন প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত কিছু বিষয়ে সেনা সদরের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সেনাসদর হতে তীব্র  প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হলো। কারণ ডা. জাফরুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে পুনরায় কিছু বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত  হয়েছে যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আলোচনা কালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম।’ ডা. জাফরুল্লাহ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে যা যা বলেছেন তা সবই ভুল।

ডা. জাফরুল্লাহ শব্দ চয়নে ভুল করে কোর্ট অব ইনকোয়ারির স্থলে কোর্ট মার্শাল বলেছেন তার এই তথ্যটিও সঠিক নয়। ব্যক্তি আজিজের বিরুদ্ধে কখনো কোর্ট মার্শাল তো হয়ইনি বরং জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘও বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারিও  হয়নি। বস্তুত পক্ষে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যটি চরম মিথ্যাচারের শামিল। ইতিপূর্বে সময় টিভিতে ভুল, দায়িত্বজ্ঞবনহীন ও উদ্দেশ্য  প্রণোদিত বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে পুনরায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও চতুরতার সাথে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে টকশোতে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এর উৎস হিসেবে সুকৌশলে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল দুরভিসন্ধিমূলক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে কখনো কোনো গ্রেনেড হারানো, চুরি বা বিক্রি হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশন লাইভ টকশোতে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য প্রদান উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধনের কোনো চেষ্টা করেননি। তাঁর সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্টত যে তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল পদবির  সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীপ্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশ প্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।

জনগণের আস্থা ও বিশ্বসততার কেন্দ্র বিন্দু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের আগে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা বাঞ্চনীয়। মিথ্যা/ভুল তথ্য পরিবেশন একটি গর্হিত অপরাধ। কেননা ভুল তথ্য এক দিকে যেমন দেশ মাতৃকার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তেমনি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের সুযোগ নিতে পারে। তাই সেনাবাহিনী বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে তথ্য পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’