অজুহাত দেখিয়ে আদালতকে সম্মান করেননি : দুদকের আইনজীবী

Looks like you've blocked notifications!
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি : এনটিভি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদন করে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের আদেশকে সম্মান করেননি বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, এই মামলায় ৩২ জন সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্য সম্পন্ন করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর বক্তব্য প্রদান করেছেন এবং ৩৪২ ধারায় আসামিগণ আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন। তারপর আড়াই বছর চলে গেলেও উনারা যুক্তিতর্ক প্রদর্শন করেননি। আদালত বারবার অনুরোধ করেছেন তাঁদের যুক্তিতর্ক প্রদর্শন করতে। কিন্তু উনারা বারবার নানা অজুহাত এবং একগুঁয়েমি দেখিয়ে আদালতের আদেশকে সম্মান করেননি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আগামী ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

পরে রায়ের দিন ধার্য না করে আরো সময় চেয়ে আবেদন করেন মামলার অন্যতম আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চালাতে পারবে বলে যে আদেশ বহাল রেখেছেন আমরা তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আছেন। তাই আদালতে আসতে পারছেন না। তাই মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করছি।

ওই সময় আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এসব কথা বলেন।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসুক আর নাই আসুক মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলবে। তাতে তাঁর আইজীবীদের উচিত ছিল, আজকে তাঁদের যুক্তিতর্ক আদালতে প্রদর্শন করা। আদালতের কাছে এ ব্যাপারে কিছু বলা। কিন্তু না, আজকেও আপনারা দেখেছেন তাঁরা সময়ের আবেদন করে কালক্ষেপণ করছেন, দীর্ঘায়িত করছেন, বিলম্বিত করছেন।’

কাজল বলেন, ‘আদালতের মনে হয়েছে আমরা যে আবেদন করেছি সেটি গ্রহণযোগ্য। এ কারণেই আদালত বিচারের কার্যক্রমসহ সবকিছু আজকে ক্লোজ করে দিয়ে রায়ের দিন ঘোষণা করেছেন। আগামী ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। এই মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নামটাও তিনি ব্যবহার করেননি। শুধু বেগম খালেদা জিয়া নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট ওপেন করে তিনি তিন কোটি ১০ লাখ টাকা জিয়াউর রহমানের নামে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছেন।’

কাজল বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে এই মামলা খালেদা জিয়া জেলখানায় থাকাকালীন তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে আমরা দরখাস্ত করেছিলাম। তাঁরা এই দরখাস্তে অনাস্থা জানিয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন।  আদালত তাদের উপস্থিতিতে তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেন।’

আজ আদালতে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।

পরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি তাঁকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আজ রায়ের দিন ধার্য করার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যুক্তিতর্ক এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ধার্য করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। বিনা বিচারে সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের নির্দেশে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।