কক্সবাজারে ৪৩ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ
কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলীয় এলাকার ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। এ সময় তাঁরা ৯৪টি অস্ত্র ও সাত হাজার ৬৩৭টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করেন।
এ উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৭। এ সমাবেশেই জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
র্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে রয়েছেন- মহেশখালীর আঞ্জু বাহিনীর ১০ জন, রমিজ বাহিনীর দুইজন, নুরুল আলম ওরফে কালাবদা বাহিনীর ছয়জন, জালাল বাহিনীর ১৫ জন,আইয়ুব বাহিনীর নয়জন এবং আলাউদ্দিন বাহিনীর একজন।
সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু ও বনদস্যুদের আর্থিক সহায়তা দিবে সরকার। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে কাজে লাগানো হবে বলেও তিনি জানান।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, ‘আমরা জলদস্যু, যারা বনদস্যু তাদেরকে আমরা বলে আসছি, তোমরা সেরেন্ডার করো, নতুবা তোমাদের যে করুণ পরিণতি হবে, সেটার গ্যারান্টি আমরা দিতে পারব না। কী হবে, কী ঘটনা ঘটবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার আমাকে বলেছেন যে, এরা যেন আবার জলদস্যু না হয়, সেই ব্যবস্থাটি করবা। আমরা কাউকে ছাড় দেওয়ার জন্য আমরা এখানে বসে থাকিনি। আমরা জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি।’
সমাবেশের পরে বিকেলে কক্সবাজারের একটি হোটেলে মাদকবিরোধী এক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেও যোগ দেন র্যাবের মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সভায় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘এই সময়ে আমরা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছি। কক্সবাজারকেই ধরা হয় যে মাদকের উৎস। এখানে ২৩ লক্ষ লোক বসবাস করে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই ২৩ লক্ষ লোকের মধ্যে খুবই সামান্য একটা অংশ, এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই সামান্য অংশটাই কিন্তু আমার দেশকে খাবলে খাচ্ছে, কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি এই ২৩ লক্ষ মানুষকে অনুরোধ করব, এখানে যে মুষ্টিমেয় লোক জাতির ওপর যে গজব সৃষ্টি করেছে, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে জাতিকে এই গজব থেকে মুক্ত করি।’
এ সময় বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কক্সবাজারের অনেক লোক মিডিয়ায় কাজ করেন আমি জানি। গত ১০ বছরে আমি কক্সবাজারের মাদক ব্যবসা নিয়ে কোনো রিপোর্ট দেখি নাই। কারণটা কী ভাই? আপনাদের ভয় দেখানোর কোনো দুঃসাহস বাংলাদেশের কারো নাই। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশের কেউ আপনাদের গায়ে হাত দিতে পারবে না।’
এ ছাড়া মাদক পরিবহনকারী লঞ্চ, স্টিমারের মালিক চালকদেরও সাবধান হতে বলেন বেনজির আহমেদ। সাবধান করেন সড়কের যানবাহন মালিক শ্রমিকদেরও। তিনি বলেন, ‘আমরা অসংখ্য বাস ধরেছি, তিন-চার কোটি টাকা মূল্যের বাস। এর মধ্যে বিশেষ কায়দায় পরিবহন করা হচ্ছে। বাস মালিকদের বলব, এখন কিন্তু আমরা ছেড়ে দিচ্ছি বাস। কিন্তু যদি একের পর এক কোনো মালিকের বাস এই ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। আমরা কিন্তু তখন এটা ভিন্নভাবে ভাবব।’
এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক দুর্নীতি বিষয়েও কথা বলেন। বেনজির আহমেদ বলেন, ‘ইনকাম ট্যাক্সের বন্ধুরা দেখেন না একটু। ডাকেন না ফাইলটা। এন্টি করাপশানের লোকেরা বসে আছেন, বেতন নিচ্ছেন সরকারি। ডাকেন না, যে ভাইজান আসেন, এই যে বাড়ি বানাইছেন, প্রাসাদের মতো, টাকাটা পাইলেন কোথায়। আসেন আমরা এই উদ্যোগে সবাই সামিল হই। এরা পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।’
এ ছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।