‘শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে হবে’

Looks like you've blocked notifications!
জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : বাসস

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে মানবসম্পদ, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে অধিক বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মানবসম্পদ, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে অবশ্যই আরো বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের মানবসম্পদকে প্রস্তুত করার জন্য অধিক বিনিয়োগ করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি আজ মঙ্গলবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বৈশ্বিক নেতাদের বিনিয়োগ সম্মেলনে এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি গত ২২ অক্টোবর থেকে জেনেভায় পাঁচদিনের সরকারি সফরে আছেন। তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিক বিশেষ ইনসেন্টিভ প্রদানের মাধ্যমে গ্রিন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অধিক বিনিয়োগ করতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডায় আমাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।’

বিশ্বায়নের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিল্প বিপ্লব এবং বিজ্ঞান আবিষ্কারে গতি আনতে বছরের পর বছর সময় লেগেছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে যে যোগাযোগ বেড়েছে, তা পণ্য ও সেবা স্থানান্তরে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে এর সুফল সবার কাছে সমভাবে পৌঁছেনি।’ বিশ্বায়ন থেকে যাতে অধিকসংখ্যক মানুষ সুফল পেতে পারে, এ জন্য বিনিয়োগ নীতি সময়োপযোগী করার পরামর্শ দেন তিনি।

আঙ্কটার্ডের ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮-এর উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০১৭ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ২৩ শতাংশ কমেছে এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে ২০১৬ সালে এফডিআই ১০ শতাংশ কমার পর আর পুনরুদ্ধার হয়নি। স্বল্পোন্নত দেশসমূহে গত বছরে এফডিআই ১৭ শতাংশ কমেছিল। গত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এলডিসি থেকে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণের জন্য একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত আবিষ্কারভিত্তিক ব্যবস্থা রেখে আমাদের সহায়তা করা প্রয়োজন। আমাদের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা এবং টিআরআইপি চুক্তির ৬৬.২ ও ৬৭ ধারার ধারার আলোকে বেসরকারি এফডিআই থেকে প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি আবশ্যক।’

উন্মুক্ত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল ও অনুধাবনযোগ্য কাঠামো গঠনের ওপর জোর দেন। তিনি আরো বলেন, ‘এসব ও অনুরূপ অন্যান্য পদক্ষেপ এলডিসিতে আরো বেশি এফডিআই প্রবাহ নিশ্চিত করবে, যা ২০৩১ সাল নাগাদ এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যাপক সহায়তা দেবে।’

প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা এবং দীর্ঘদিন এখানে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ বিষয়টি এ দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ব্যাপক ক্ষতি করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ সম্প্রীতি ও অগ্রগতি বজায় রাখতে এখনো নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিশেষ করে তরুণ ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং সঠিক বিনিয়োগের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা ২০২১ সাল নাগাদ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে মোঙ্গলিয়া ও মন্টিনিগ্রো, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আঙ্কটার্ডের মহাসচিব মুখিসা কিতুই, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব বিনিয়োগ ফোরাম (ডব্লিউআইএফ) হচ্ছে একটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিবার্ষিক বহুমুখী অংশীজন সমাবেশ, যেখানে বিশ্বের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহের বিষয়ে আলোচনা ও কার্যক্রম সংক্রান্ত মতবিনিময়ের সুযোগ থাকবে। এখানে আন্তর্জাতিকীকরণ ও শিল্পায়নের এই নতুন যুগে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে।