রাজশাহীর বিএনপি-আ. লীগ নেতাদের শান্তি রক্ষার শপথ
দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার শপথ নিয়েছেন রাজশাহীর বিএনপি, আওয়ামীলীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, রাজশাহীর মানুষ শান্তিপ্রিয়। নির্বাচনকে ঘিরে তারা কোনো সংঘাত চায় না। তারা চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘শান্তিতে বিজয়’ অনুষ্ঠানে এই প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন রাজশাহীর রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের মুনলাইট গার্ডেন কনভেনশন সেন্টারে ‘শান্তিতে বিজয়, শান্তি জিতলে জিতবে বাংলাদেশ’- স্লোগানকে সামনে রেখে প্রচারণামূলক এই সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক।
এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীত শেষে ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ কবিতা পাঠ করেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শাহ ওলা আলম।
অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা শান্তিপ্রিয় ভাবে বাংলাদেশে ভোট চায়। বাংলাদেশের মানুষ কোনো সংঘাত চায় না। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় আছে, তাই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তাদের বেশি।’
অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কী করলে আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে যেন কোনো ভাবেই কোনো সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের পর দেশে যেন কোনোভাবেই শান্তি বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দলকে নির্বাচন পরবর্তী দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছে, আসুন আমরা তা ভুলে যাই। রাজশাহী আজকে যা চিন্তা করে, বাংলাদেশ তা পরে চিন্তা করে। বাংলাদেশের সব জায়গার থেকে রাজশাহী সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় জায়গা। আমরা সব দলের নেতারা রাজশাহীর উন্নয়নে এক সাথে কাজ করি। আমাদের মরহুম জাতীয় নেতাদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে আসুন আগামী সংসদ নির্বাচন আমরা সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করি। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করে সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করি।’
রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনা আছে তা মানা হলে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্ট শ্রমিক ও বিদেশে যারা কাজ করে, তারাই আমাদের দেশের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে তাদের মাধ্যমে। কিন্তু এই অর্থ কিছু কতিপয় লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। অর্থই অশান্তির কারণ। চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশে শান্তি ফিরে আসবে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘রাজশাহীতে রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন থাকতে পারে। তবে বন্ধুসুলভ আচরণ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে। এতে করে অন্য অঞ্চলের চেয়ে রাজশাহীতে রাজনৈতিক সহিংসতা কম হয়। অনেকটা শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক চর্চা বিরাজমান করে।’
রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন বলেন, ‘নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীরা রয়েছে। নারীর জয়, সবার জয়। দলমত নির্বিশেষে রাজশাহীর উন্নয়নে সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। এজন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে হবে।’
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব দ্য পার্টির ডেপুটি ম্যানেজার অস্টিন পাওয়ার বলেন, ‘২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪০০ রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এর আগে আমাদের আয়োজনে পাঁচটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে সব দলের আয়োজনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাই যেন একসাথে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে সব দলের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। শান্তিতে দেশের তরুণ, যুবক, পৌঢ়, বৃদ্ধ সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা। রাজনৈতিক নেতাদের ট্রেনিং দিচ্ছি। বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। সকলের সহযোগিতায় গণতন্ত্রের যাত্রা যেন সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়, সে চেষ্টা আমরা করছি। আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহানগর সভাপতি সাবেক রাসিক মেয়র মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলন, বগুড়া জেলা মহিলা দলের নেত্রী লাভলী রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী কাজী হেনা, নাটোর জেলা মহিলা লীগের নেত্রী রত্না আহমেদ, নওগাঁ জেলা বিএনপির নেত্রী রায়হান আক্তার রনি প্রমুখ।