যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, বাঁচাতে গিয়ে বাবা আহত
গাজীপুরে মোতালেব হোসেন (২৬) নামের এক যুবলীগ নেতাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তাঁকে বাঁচাতে গেলে বাবাকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আজ সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মোতালেব হোসেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ছোট দেওড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন ওরফে মোফার ছেলে এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের একাংশের সভাপতি।
নিহতের মা মমতাজ বেগম, চাচা মো. লোকমান হোসেনসহ স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, সোমবার সকালে ছোট দেওড়া এলাকার বাড়ি থেকে মোতালেবকে ডেকে বাইরে নিয়ে যান স্থানীয় সুমন (যুবদল কর্মী জহিরের ভগ্নিপতি)। এ সময় সুমন মোতালেবকে জানান, জহির তাঁকে (মোতালেবকে) গালিগালাজ করেছে। এই কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন মোতালেব। তিনি আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে জহিরের বাড়িতে গিয়ে মালামাল ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে মোতালেবকে বাড়ি থেকে ডেকে পাশের মজিবুর মেম্বারের পরিত্যক্ত বাড়ির পুকুর পাড়ে নিয়ে যান জহির। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জহির, বাবু, নাজিম, ফিরোজ ও ফাইজুলের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন লোক ধারালো অস্ত্র দিয়ে মোতালেবকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মোতালেবের গলা, মাথা, পিঠ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। এর ফলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মোতালেব। এ সময় মোতালেবকে বাঁচাতে গেলে বাবা মোফাজ্জলকেও এলোপাতাড়ি কোপায় সন্ত্রাসীরা।
ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর জহির ও তাঁর লোকজন মোতালেবের মা মমতাজ বেগমকে হুমকি দেন।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত মোতালেবের বাবা মোফাজ্জল হোসেন। ছবি : এনটিভি
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশ ও এলাকাবাসী বাবা ও ছেলেকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোতালেবকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মোফাজ্জলের মাথা, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজাহান মিয়া সাজু ও এলাকাবাসী জানায়, ছোট দেওড়া এলাকার আবদুল মোতালেব ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের একাংশের সভাপতি। তাঁর সঙ্গে প্রতিবেশী রিপন লস্করের বন্ধুত্ব ছিল। বন্ধুত্বের কারণে তাঁরা একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। দুই থেকে আড়াই মাস আগে মোতালেব একটি মোটরসাইকেল কিনেন। রিপন প্রায়ই ওই মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। কয়েকদিন আগে বাইরে যাওয়ার জন্য মোতালেবের কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি চান রিপন। এ সময় মোটরসাইকেল না দেওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ ঘটনার পর মোতালেবের সঙ্গে রিপনের পরিবারের বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে মোতালেব শনিবার সন্ধ্যায় রিপনের বড়ভাই স্বপন লস্করের ভোড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালান এবং বাড়ির লোকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে স্বপনের বোন শাবানা ও ভাগ্নে সাজেনসহ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় মোতালেবসহ কয়েকজনকে আসামি করে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, শনিবারের হামলার ঘটনার জের ধরেই সোমবারের এ ঘটনা ঘটেছে। রিপন লস্করের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে ভোড়া এলাকার বাদলের বাসায় ডাকাতি করার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) প্রণয় ভূষণ দাস জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মোতালেবের মৃত্যু হয়। তাঁর বাবা মোফাজ্জলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমীর চন্দ্র সুত্রধর জানান, নিহত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাদকের সংশ্লিষ্টতা ও হত্যাসহ একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় মোতালেবের লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।