জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট

খালেদা জিয়ার আপিল ও সাজা বৃদ্ধির রায় আজ

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুরোনো ছবি : এনটিভি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিল, অন্য আসামিদের আপিল এবং দুদকের সাজা বৃদ্ধির আবেদনের ওপর আজ মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সকাল সাড়ে ১০টার পর এ রায় ঘোষণা করবেন। গতকাল সোমবার এ বিষয়ে শুনানি শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে গতকাল সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তিতে সময় বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আগে নির্ধারণ করে দেওয়া ৩১ অক্টোবর সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি শেষ করার নির্দেশ বহাল থাকছে।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

পরে মো. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল শুনানিতে এর আগে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সেই আদেশ অনুসারে পুনরায় আপিল শুনানির সময় বৃদ্ধি চেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সে আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে এ মামলায় হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তিতে পূর্বের নির্ধারণ করা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বহাল থাকছে। তাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে করা খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি আর মাত্র একদিন পরেই (আজ মঙ্গলবার) নিষ্পত্তি করতে হবে।’

এর আগে গত ৯ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে আরো সময় চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন জানালে সোমবার (২৯ অক্টোবর) তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই দিনই তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি দুজন হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

পলাতক তিনজন হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁরা এ আবেদন করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের ওপর রায় ঘোষণা হবে আজ।

মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছে

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রমনা শাখার সোনালী ব্যাংকে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যার নম্বর ৫৪১৬। ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ডি ডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০-তে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা তৎকালীন বাংলাদেশি মুদ্রায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়। পরে খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন আসামির নামে ‘এফডিআর’ করে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উত্তোলন করেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১০৯ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২ নম্বর আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন। এজাহারে ঘটনার সময়কাল হিসেবে ১৩ নভেম্বর ১৯৯৩ থেকে ২৮ মার্চ ২০০৭ সালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।