কিডনি বিক্রির অভিযোগ, মারা গেলেন পরিচালকের মা

Looks like you've blocked notifications!
পরিচালক রফিক শিকদার ও মা রওশন আরা। ছবি : এনটিভি

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা গতকাল বুধবার রাত ১০টায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। চিকিৎসক প্রতারণা করে দুটো কিডনিই বিক্রি করে দেওয়ার কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নির্মাতা রফিক শিকদার।

মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রফিক শিকদার লিখেছেন, ‘পাষাণ ডাক্তারের নির্মমতার কাছে জীবনযুদ্ধে হেরে গেছেন আমার মা। আমাদের ছয় ভাইবোনকে বিচারহীনতার নরকে ফেলে রেখে অভিমানে এইমাত্র ওপারে চলে গেলেন আমার মা।’

দীর্ঘদিন ধরেই রফিক শিকদার অভিযোগ করে আসছিলেন, তাঁর মায়ের কিডনি সরিয়ে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। গত সোমবার লিখিত এক বক্তব্যের মাধ্যমেও এর বিচার দাবি করেন তিনি। রফিক শিকদার সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন, ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলাল ও তাঁর সহযোগীদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রফিক শিকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে প্রশ্ন, কে বড়? আমার অসহায় মা নাকি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল? আপনি কার? শোষকের নাকি শোষিতের? নিশ্চয়ই আপনি শোষিতের পক্ষে। ডাক্তার সাহেব কত টাকার বিনিময়ে আমার বোকাসোকা মায়ের কিডনিটি অন্যত্র বিক্রি করেছেন, তা জানার চেষ্টা করবেন কি? আমার মায়ের সঙ্গে করা এই অন্যায়ের বিচার শেষ পর্যন্ত পাব কি? সুবিচার ও আপনার প্রতীক্ষায় রইলাম। অন্যথায় জিতে যাবে ডাক্তার। ডাক্তার জিতলে হেরে যাবে মানবতা।

কিডনি জটিলতার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দেহে জটিলতা সৃষ্টি হলে রফিক শিকদার নিশ্চিত হন, তাঁর মায়ের দুটো কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে।

চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার আরো বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলারের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের দশম তলার অপারেশন থিয়েটারে মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হয়। কিন্তু আনুমানিক রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে বলেন, অপারেশনের পর থেকে আপনার মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত উনাকে আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। কোনো প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি। অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম এ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে মায়ের পেটে কোনো কিডনির অস্তিত্ব না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।’

‘পরে জানা যায়, পাথর অপসারণ করতে গিয়ে আমার মায়ের দুটো কিডনিই কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিউজ হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল দাবি করেন, রফিক শিকদারের মায়ের কিডনিটি প্রকৃতিগতভাবেই জোড়া লাগানো ছিল। যে কারণে নষ্ট কিডনিটি ফেলতে গিয়ে অপারেশনকৃত স্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা পরে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রোগীর ডান দিকের সুস্থ কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে। অথচ অপারেশনের পূর্বের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট, আলট্রাসনোগ্রামের একাধিক রিপোর্ট বলছে, আমার মায়ের দুটো কিডনিই আলাদা আলাদা স্থানে আবদ্ধ ছিল।’

এদিকে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমে ২৯ সেপ্টেম্বর রফিক শিকদার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। এ বিষয়ে রফিক শিকদার বলেন, ‘আইনি নোটিশ পাঠানোর পর অভিযুক্ত চিকিৎসক দুলাল দোষ স্বীকার করে কিডনি প্রতিস্থাপনের সব খরচ বহনসহ কিডনিদাতাকে আট লাখ টাকা দিতে সম্মত হন। এ নিয়ে স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। কিন্তু এখন গড়িমসি করছেন।’

রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মায়ের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য হচ্ছে অভিযুক্ত প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলাল। যিনি অভিযুক্ত, তিনি তদন্ত কমিটিতে কী করেন?’

আর এ বিষয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলালের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে এর আগে একাধিক মিডিয়াকে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘অভিযোগ তো মিথ্যা নয়, আমরা বললাম এটা আমরা বাঁ দিকে অপারেশন করেছি, বাঁ কিডনি ফেলার জন্য এটা সিদ্ধান্ত ছিল। জন্মগতভাবে বাঁ কিডনির সমস্যা ছিল, এর সঙ্গে ডান দিকের কিডনি এমনভাবে পেঁচানো ছিল যে এবং ওই অবস্থা ব্লিডিং হচ্ছিল, যা কোনোভাবে বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না, ফলে অপারেশনের সময় ডান কিডনিটাও উঠে চলে আসে।’

এ ঘটনার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ও ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।