সাগরপথে রোহিঙ্গা পাচার চলছেই

Looks like you've blocked notifications!
সেন্টমার্টিন উপকূলে মালয়েশিয়া পাচারকালে গতকাল বুধবার ছয় দালালসহ ৩৯ রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। ছবি : এনটিভি

থেমে নেই রোহিঙ্গা পাচার। নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীরা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের পাচার করছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাচারকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে পাচারকারীদের দালাল ও ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা আটকও হচ্ছে। তবু থামছে না পাচার।

গতকাল বুধবারও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজলার সেন্টমার্টিন উপকূলে মালয়েশিয়া পাচারকালে ছয় দালালসহ ৩৯ রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে ওই দলটিকে আটক করা হয়।

এ নিয়ে গত দুদিনে সাগরপথে পাচারকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের হাতে দালালসহ মোট ৫৩ রোহিঙ্গা আটক হলো। গত মঙ্গলবার ভোররাতে মালয়েশিয়া পাচারকালে পাচারকারীরা ১২ রোহিঙ্গাকে থাইল্যান্ড সীমান্ত বলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চরে নামিয়ে দেয়। সে সময় দুই দালালসহ বিজিবি তাদের আটক করে।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফয়েজুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, গতকাল বুধবার সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি ট্রলার থেকে ছয় দালাল, ৯ শিশু, ১০ নারী ও ১৪ পুরুষকে আটক করা হয়। পাচারকারী চক্রটি প্রলোভন দেখিয়ে ওই রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পাচার করছিলেন। তারা সবাই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার শিকার হয়ে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ১৯টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এসব রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে পাচার করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক দালালচক্র। এরা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার নামে প্রতারিত করছে। বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

২০০৭ সালে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে সাগরপথে ট্রলারে করে প্রথম মানবপাচার শুরু হয়েছিল। অর্থের বিনিময়ে দালালচক্র হাজার হাজার স্থানীয় ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে সাগরপথে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া পাচার করে। সে সময় কিছু লোক মালয়েশিয়া পৌঁছলেও যাত্রাপথে ট্রলারডুবিতে অনেকের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া টাকার জন্য শত শত মানুষকে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে জিম্মি করে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। এসব চক্রের খপ্পরে পড়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক নারী-পুরুষ।

২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই সব পাচারকারী চক্র সক্রিয় ছিল। পরে সে বছর টেকনাফ থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এলাকার শীর্ষ পাচারকারী শাহপরীর দ্বীপের ধলু হোছন, কাঁটাবনিয়ার জাহাঙ্গীর ও জাফর আলম নিহত হলে অন্য পাচারকারীরা গা-ঢাকা দেয়। মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সে সময় অনেক দালালের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। ফলে স্তিমিত হয়ে আসে সাগরপথে মানবপাচার।

কিন্তু তিন বছরের মাথায় আবারও ওই পাচারকারী বিভিন্ন চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আটক দালালদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থার দাবি স্থানীয়দের।