‘মনে হয়, সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি’

Looks like you've blocked notifications!
সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিজয়ী দল ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের বিতার্কিকদের ক্রেস্ট দিচ্ছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছবি : বিজ্ঞপ্তি

বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এখন পর্যন্ত সেই ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দেখা যায়নি। সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এতটাই নমনীয় আচরণ প্রদর্শন করে যে, মনে হয় সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে এক ধরনের জিম্মি হয়ে আছে।’    

আজ শনিবার বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন।

পরে এসব তথ্য এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পরিচালক তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন।

কয়েকদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দুইদিনের ধর্মঘটে ব্যাপক হেনস্থার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। চালক ও যাত্রীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেওয়া এবং মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ছিল সবচেয়ে  আপত্তিকর। এমনকি ধর্মঘটে অ্যাম্বুলেন্সে আটকা পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

পরে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশও দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

আজ ছায়াসংসদে এসে পরিবহন শ্রমিকদের আচরণ ও সরকারের তাদের প্রতি নমনীয়তার সমালোচনা করেই সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। এ সময় পথচারীদেরকেও সতর্ক হওয়ার আহ্বান তিনি।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, আইন মানতে হবে। আইন না মানার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারীদের মাঝেও আমরা দেখছি কানে হেডফোন লাগিয়ে এবং মোবাইলে কথা বলতে বলতে অসতর্কভাবে রাস্তায় চলাচল করতে। এতে করে প্রতিবছর অনেক সাধারণ মানুষসহ অনেক স্বপ্নময় তরুণের অকাল মৃত্যু ঘটছে। যা থেকে পরিত্রাণের জন্যে আইন পালনের পাশাপাশি সচেতনতাও তৈরি করতে হবে।’ 

এ ছাড়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ভুল বুঝানো হচ্ছে বলেও জানান সৈয়দ আবুল মকসুদ।

সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানের অতিথি বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সঙ্গে বিতার্কিকদের দেখা যাচ্ছে। ছবি : বিজ্ঞপ্তি

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ফলে দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের নানা অর্জন থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা বিধানে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। সেবার পরিবর্তে সড়ক পরিবহন সেক্টরে প্রতিনিয়ত চরম নৈরাজ্য ও  প্রতিহিংসা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের সময়ে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের মুখে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের পোড়া মবিল মাখিয়ে দেওয়ার দৃশ্য সবাইকে বিস্মিত না করে পারেনি।’

কিরণ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও এই ঘটনার দৃশ্যমান কোনো বিচার কিংবা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দেখতে পাইনি। দুর্বল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত রাস্তা, মহাসড়কে হাটবাজার বসা, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক আইন না মানা, ভুয়া লাইসেন্সধারী ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিআরটিএর ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পথচারীদের মধ্যে জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বেপরোয়াভাবে চলাচল সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরে অ্যাপভিত্তিক যে রাইড শেয়ার চালু হয়েছে তার চালকদের সক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।’ 

আজকের প্রতিযোগিতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

এতে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, মো. আতিকুর রহমান, সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন, ড. তাজুল ইসলাম তুহিন ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জাহিদ রহমান।