সিডরের ১১ বছর : এখনো প্রিয়জনের অপেক্ষায় তাঁরা

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ২০০৭ সালের আজকের এই দিনে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। সেই ঘটনার ১১ বছর পরও যেন স্বজনদের প্রতীক্ষার শেষ নেই। তাঁদের চোখের জলও যে আর শুকায় না। সিডরের নির্মম বলি সাতক্ষীরা শহরের কুখরালির জেলেপাড়ার কেনা বৈদ্যের স্ত্রী পদ্মা রানী এবং তাঁর দুই সন্তান সাগর ও তুফানদের চোখ আজও জলে ভেজে, অপেক্ষায় থাকে মন। ফিরবে হয়তো সেদিন সাগরে যাওয়া তাদের আপন মানুষটি।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের পর থেকে এভাবেই কাটছে বছরের পর বছর। আর প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা সাতক্ষীরার সেইসব জেলে আজও শিউরে ওঠেন সাগরে তিন দিন ভাসমান থেকে জীবনরক্ষার স্মৃতি মনে করে।
মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদনে আটকা পড়া কুখরালির রতন বৈদ্য ও তাঁর ছেলে কেনা বৈদ্য সাগরে আলাদা ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সিডরের কবলে পড়ে রতন বৈদ্য প্রাণে বেঁচে এলেও চিরদিনের মতো হারিয়ে যান তাঁর ছেলে কেনা বৈদ্য। রতন বৈদ্য ও তাঁর স্ত্রী শান্তি রানী আজও পুত্রশোক বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেনার স্ত্রী পদ্মা রানী তাঁর দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দিন কাটান।
এদিকে সাগরে ভাসমান ড্রামের সঙ্গে নিজেকে রশি দিয়ে বেঁধে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে রক্ষা পাওয়া তালার মালোপাড়ার মিন্টু ও উত্তম সেদিনের ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে জানান, সিডরের দাপটে তাঁর বাবা ও কাকা গৌর হালদার ও অজিত হালদারের সলিল সমাধির দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে হয়েছে তাঁকে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুরের খোলপেটুয়া নদীতে শিক্ষক বাবা ইব্রাহীমকে বাঁচাতে গিয়ে সলিল সমাধি হয় ছেলে আইউব আলীর।
সাগর জলে মাছ ধরা ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, দুবলার চর, আলোরকোলসহ নানা স্থানে কর্মরত সাতক্ষীরার ২৩টি প্রাণ সিডরে সাগরে হারিয়ে গিয়েছিল।
সাতক্ষীরায় সিডরের আঘাত জোরালো না হলেও জেলার বাইরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তালার অজিত, গৌর, গোবিন্দ, কুড়িকাহনিয়া ও শ্রীপুরের আমিরুল ও লাভলু, বড়দলের সন্যাসী, জয়নগরের লুৎফর রহমান, রসিদ, লালু হালদার, সাঈদুর রহমান, আবদুল, নজিবুল, ফিরোজা, আনারুল, আয়েশা, দাঁতনেখালির আফসার, বড়কুপোটের শামীম হোসেন, খোকন রাজবংশীসহ অনেকেরই জীবন প্রদীপ নিভে যায়। এঁদের কারো দেহ পাওয়া গেছে, কেউ বা আজও নিখোঁজ। সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে এবারও পার হতে যাচ্ছে ১৫ নভেম্বর।