বাস ভাড়া করে শাশুড়িকে হত্যা : মেয়ে জামাই ও বেয়াইন রিমান্ডে

Looks like you've blocked notifications!
আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে নারী হত্যায় গ্রেপ্তার মো. নূর ইসলাম, তাঁর মা আমেনা বেগম ও বিয়ের ঘটক মো. স্বপন। ছবি : পিবিআই

ঢাকার আশুলিয়ায় চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ছুঁড়ে ফেলে, মেয়েকে হত্যার ঘটনার মামলায় দুই আসামির রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তারিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

আদালতের সরকারি কৌসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহজাহান নিহতের মেয়ের জামাই নূর ইসলাম ও তাঁর মা (নিহতের বেয়াইন) আমেনা বেগমকে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এছাড়া একই তদন্ত কর্মকর্তা বিয়ের ঘটক মো. স্বপনের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।

বাবুল বলেন, সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক নিহতের মেয়ের জামাই নূর ইসলাম ও তাঁর  মা আমেনা বেগমকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ও একই বিচারকের কাছে বিয়ের ঘটক মো. স্বপন দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিকে আদালতে আসামি নূর ইসলাম ও নিহতের বেয়াইন আমেনা বেগমের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

শুনানির সময় আদালত আসামিদের বলেন, জরিনাকে আপনারা মেরে ফেললেন? তখন আসামি  নূর ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। বিচারক তখন বলেন তাহলে কে জানে? তখন নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার মামা এ বিষয়ে ভালো জানেন।’

এরপর নূর ইসলাম বিচারকের কাছে বলেন, ‘ভিকটিম (জরিনা খাতুন) আমার শাশুড়ি। উনি অসুস্থ মানুষ, কাশতে কাশতে মরেই যান। ওনাকে মেরে আমার লাভ কি? অসুস্থ মানুষকে মেরে আমার লাভ কি?’

এরপর আদালত তাদের দুইজনের দুইদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। 

এদিকে বিয়ের ঘটক স্বপন একই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

নিহত জরিনার মেয়ের জামাই মো. নূর ইসলাম (২৯), বেয়াইন আমেনা বেগম (৪৮) ও মেয়ের বিয়ের ঘটক মো. স্বপনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বাসটিও (ঢাকা মেট্রো জ- ১১-১৭৯২) আটক করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার জানান, নিহত জরিনা খাতুনের মেয়ে রোজিনার বিয়ের পর থেকেই তাঁর শ্বশুর বাড়িতে কলহ চলে আসছিল। সপ্তাহ খানেক আগে এই কলহ মারাত্মক আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে রোজিনাকে তাঁর স্বামী নূর ইসলাম ব্যাপক মারধর করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে, এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। রোজিনার স্বামী ও তাঁর শ্বাশুড়ি পরিবারের কলহের জন্য রোজিনার মা জরিনাকে দায়ী করছিলেন। ঘটনার দিন এই কলহের সমাধান করতেই নিজের বাবাকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন জরিনা।

এদিকে, জরিনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন নূর ইসলাম ও তাঁর মা আমেনা বেগম। পরে নূর ইসলাম বিয়ের ঘটক স্বপনের সহযোগিতায় একটি মিনিবাস ভাড়া করেন। বাসের চালক, কন্ড্রাক্টর, দুজন সহকারীসহ চারজনের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়।

ঘটনার দিন, বাসটি আগে থেকেই শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিল। পরে স্বপন স্ত্রী  জরিনা ও তাঁর বাবা আকবর আলী মন্ডলকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে যান। বাসটিতে জরিনা ও তাঁর বাবা ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল না। তাই, চালক ও অন্য সহযোগীরা বাসটি আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আশুলিয়া থানা এলাকার মরাগাং আশুলিয়া ব্রিজের উত্তর পাশে নিয়ে আসেন। সেখানে জরিনার বাবাকে মারধর করে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তারা। পরে জরিনাকে হত্যা করে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জরিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

তবে, ওই ঘটনার পর নিহতের মেয়ের জামাই গ্রেপ্তার নূর ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসকাওলী গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের স্ত্রী জরিনা খাতুন তাঁর বাবা আকবর আলী মন্ডলের (৭০) সঙ্গে গত ৯ নভেম্বর দুপুরে আশুলিয়া থানাধীন গাজীরচট মুন্সীপাড়া এলাকায় মেয়ের জামাই নূর ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওইদিন তাঁরা দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল ৫টার দিকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন এবং টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর বাসে থাকা সহকারী ও আরো কয়েকজন লোক মারধর করে আকবরকে আশুলিয়ার মরাগাং এলাকায় নামিয়ে দেন। পরে জরিনা খাতুনকে নিয়ে বাস চলে যায়। আকবর আলী বিষয়টি তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে জানান। সংবাদ পাওয়ার পর জরিনার মেয়ের জামাই নূর ইসলামসহ আকবর আলীর আত্মীয় স্বজন এসে আশুলিয়া ব্রিজের ৫০০ গজ উত্তর পাশে মরা গাং এলাকায় জরিনা বেগমের মরদেহ খুঁজে পান।

ঘটনার পর নিহতের মেয়ের জামাই নূর ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩৫।

মামলাটি প্রথমে ঢাকা জেলার উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।