নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে : রিজভী

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : এনটিভি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদের ভোটে সুরক্ষা দিতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।  

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা জনগণের সম্পদ লুটপাট করে একেকজন অর্থবিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কেউ কেউ বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীদের ‘টপ টেন’ তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। লোভ, লালসা, রাহাজানি ও ডাকাতি চালিয়ে যাওয়ার জন্যই তারা জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় কারো কারো অঢেল সম্পদের অহরহ খবর বের হচ্ছে।

নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক থাকার ফলে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ ১০০ গুণ থেকে ৫০০ গুণ বেড়েছিল। স্ত্রীরাও পাল্লা দিয়ে গড়েছিলেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৮ সালে ধারদেনা করে নির্বাচন করেছেন এমন এমপিরাও কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে নগদ টাকা, জমি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শেয়ার সঞ্চয়পত্র, এফডিআর ইত্যাদি। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরিলুট হয়েছে। লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলোতে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। দেউলিয়া হওয়ার পথে অধিকাংশ ব্যাংক। সব জায়গায় দুর্নীতির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কী পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে সেটি যাতে জনগণ জানতে না পারে সেজন্য আওয়ামী সরকারের বংশীবাদক নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতার বিধান তুলে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির খবর ঢেকে রাখতেই আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেনি ইসি। নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী দুর্নীতিবাজদেরকে ভোটে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিধান রদ করে দিয়েছে। আয়কর বিবরণী সনদপত্রে সংক্ষিপ্তভাবে প্রার্থীর আয়-ব্যয় ও সম্পদের বিবরণীর বাধ্যবাধকতা বাতিল করে তাদের সম্পদ ঢেকে রাখার বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের অনেকেই সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া রেখেও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। করযোগ্য নয় বলে অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিবেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আইনি শিথিলতার সুযোগে নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে প্রচার-প্রচারণা চালালেও করযোগ্য আয় নেই বলে নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পার পেয়ে যাবেন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিধানটি কেবল বাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। এমনকি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) না থাকলেও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র এবার বাতিল হবে না বলে আইন করা হয়েছে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে একইসঙ্গে ঋণ ও বিল খেলাপীদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত সহজ করেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

গত ৩১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন থেকে প্রার্থীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। আগে সকল প্রার্থীর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু এখন তা বাধ্যতামূলক নয়। যাদের টিআইএন আছে কেবল তারাই জমা দিবেন। আর যাদের নেই তাদের জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

ইসি সচিব আরো বলেন, ‘আগে নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ঋণ খেলাপিদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাতদিন আগে ঋণ বা কিস্তি পরিশোধের বিধান ছিল এবং ব্যাংক থেকে কোনো কিস্তি বকেয়া নেই এমন সার্টিফিকেট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার বিধান ছিল। বর্তমান বিধান অনুযায়ী একদিন আগে ঋণ পরিশোধ করেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।’

ইসির বক্তব্য সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সেক্ষেত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পেপারস জমা দেওয়া সম্ভব। কারণ তখন যাচাই-বাছাই করার মতো সময় ও সুযোগ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে না। বড় ঋণ খেলাপিরা আইনে বড় সুযোগ পেলেও ছোট খেলাপিদের ক্ষেত্রে তা নেই। কৃষকদের বেলায়ও আইনের উল্টোটা করা হয়েছে। আরপিওর ১২ (১) এর এল উপধারা সংশোধন না হওয়ায় কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে সাত দিন আগে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন তারা।’

আরপিওর ১২ (১) এর এন উপধারা সংশোধন না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে বকেয়া টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির জারি করা পরিপত্র-১ এ এই বৈষম্য চিত্র ফুটে উঠেছে বলে দাবি করেন রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘সংশোধিত আরপিওর কারণে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের জালিয়াতি করার সুযোগ বেড়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার দুর্নীতিবাজদের এই সুযোগ দিয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে। দখল আর দুর্নীতির অন্তঃক্রিয়াই আওয়ামী সংস্কৃতি।’