বাগেরহাট-৩ : জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
বাগেরহাট-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনটি ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এখন পর্যন্ত দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এদিকে জোট করে বিএনপির বরাবরই আসনটি ছেড়ে দেয় জামায়াতে ইসলামীকে। আর বারবারই সেখানে পরাজিত হন জামায়াতের প্রার্থী।

এবার ওই আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শেখ ফরিদুল জেলা বিএনপির সহসভাপতি।

কিন্তু একইসঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারণ জামায়াতে ইসলামীর আবদুল ওয়াদুদ শেখ এবারো মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বারবার হেরে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নিয়ে এবারও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এবার চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে বিএনপির ‘ক্লিন ইমেজে’র প্রার্থী ছাড়া এ আসনে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। এ আসনে কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ড. ফরিদুল ইসলামকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে আসন রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন এমনই আশা করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

মোংলা-রামপাল এই দুই উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন। বিভিন্ন কারণে এ আসনটি প্রত্যেকটি দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচন করে ওই আসনে। তবে ওই দুইবারই বিএনপির প্রার্থীর অবস্থান ছিল তৃতীয়। সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। ২০০১ থেকে ওই আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। তারপর থেকেই সেখানে ‘নৌকা’র বিপক্ষে লড়ছে ‘দাঁড়িপাল্লা।’

বাগেরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

‘নৌকা’ নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক

আসনটিতে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এ টানা তিনবার জয়ী হয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ২০০৮ সালে ওই আসনে ‘নৌকা’ প্রতীকে জয়ী হন খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহার। ২০১৪ সালে ওই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তালুকদার আবদুল খালেক। এবার ওই আসনে হাবিবুন নাহারকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বরাবরই হেরেছে ‘দাঁড়িপাল্লা’

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন গাজী আবু বকর সিদ্দিকি। প্রতিবারই তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। ২০০৮ সালে ওই আসনে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আবদুল ওয়াদুদ শেখ। তিনিও হেরে যান তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহারের কাছে।

এ অবস্থায় জামায়াতের প্রার্থীকে দিয়ে আসনটি উদ্ধার করা যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে হারানো আসনটি উদ্ধারে বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় নেতা-কর্মীরা।

তবে এ ব্যাপারে জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, দল যাকেই মনোনয়ন দিবে তাকেই ভোট দিব।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বাগেরহাট- ৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী শেখ ফরিদুল ইসলাম ও জামায়াতের আবদুল ওয়াদুদ শেখ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

‘ধানের শীষে কেবলই বিএনপি’

রামপাল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহসীন ইজারাদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচন করার কারণে আমরা এ আসনটি হারিয়েছি। এ বছর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ড. ফরিদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করাতে শুধু আমি নয় আমাদের সব নেতা-কর্মীর মন ভেঙে গেছে। আমরা চাই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে একমাত্র ড. ফরিদুল ইসলামই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাহলেই এ আসনে জয়লাভ সুনিশ্চিত হবে।’

মোংলা পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত নেতা আবদুল ওয়াদুদ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে বিএনপির ভরাডুবি হবে। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ভোটার রয়েছে যারা কখনও কোনো দিন জামায়াতকে ভোট দিবে না। কিন্তু জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. ফরিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের যে সেবা করেছে তাতে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করলে বিএনপির বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নিতিশ বিশ্বাস বলেন, ‘মোংলা-রামপালে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করছেন। তারা কখনও জামায়াত নেতাকে ভোট দিবেন না। কিন্তু এ আসনে বিএনপি নেতা ড. ফরিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমার ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবি যাতে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগেই জামায়াত নেতা আবদুল ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়।’

রামপাল উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শহিদুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কারণে এ আসনে জামায়াত নেতারা বিএনপির পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা বিএনপিকে ভালোবাসলেও জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। এবার সাবেক ছাত্রনেতা, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ড. ফরিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে তিনি বিজয়ী হবেন। কিন্তু দল থেকে এবারও যদি জামায়াত নেতা আবদুল ওয়াদুদকে প্রার্থী করা হয়, সে সিদ্ধান্ত হবে দলের জন্য আত্মঘাতী।’

বিএনপির প্রার্থী শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেই থেকেই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা চায় আমি ধানের শীষ প্রতীকে বাগেরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচন করি। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আশা করি দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের চাহিদা অনুযায়ী দল আমাকে এ আসনে নির্বাচন করার সুযোগ দিবেন। ইনশা আল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।’