প্রথম দিন ইসিতে আপিল করলেন যে ৮৪ জন

Looks like you've blocked notifications!
আপিল করে মনোনয়ন ফিরে পেতে সোমবার নির্বাচন কমিশনে ভিড় জমান প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। পটুয়াখালী-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি আপিল আবেদন জমা দিয়েছেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন ৮৩ জন। একটি আবেদন জমা পড়েছে মনোনয়নপত্র গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৪ জন তাঁদের আপিল আবেদন জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর দুই হাজার ২৭৯টি বৈধ ও ৭৮৬টি বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল থেকে ইসিতে আপিল শুরু করেছেন অবৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত তাঁরা আপিল করতে পারবেন। ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর ওই সব আপিলের শুনানি হবে।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০৯টি মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে চার শতাধিক আপিল আবেদন জমা হতে পারে বলে মনে করছেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, তিন দিনের শুনানিতে সব আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করতে ইসিকে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। একজন আপিলকারীকে সর্বোচ্চ চার মিনিটের বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হবে না বলেও তাঁরা মনে করছেন।

মনোনয়ন ফিরে পেতে চান যে ৮৩ জন, বিভাগওয়ারি নাম ও আসনের তালিকা নিচে দেওয়া হলো :

ঢাকা বিভাগ

ঢাকা-১ আসনের বিএনপি নেতা আইয়ুব খান ও খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-৫ সেলিম ভূঁইয়া, ঢাকা-১৪ সাইফুদ্দিন আহম্মেদ, ঢাকা-১৪ আবু বক্কর সিদ্দিক, ঢাকা-২০ তমিজউদদীন, গাজীপুর-২ মাহবুব আলম ও মো. জয়নাল আবেদীন, মানিকগঞ্জ-১ তোজাম্মেল হক, মানিকগঞ্জ-২ আরিফুর রহমান খান, মানিকগঞ্জ-৩ আতাউর রহমান আতা, কিশোরগঞ্জ-২ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, কিশোরগঞ্জ-৩ ড. মিজানুল হক, মাদারীপুর-১ জহিরুল ইসলাম মিন্টু ও মাদারীপুর-৩ আবদুল খালেক মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগ

চট্টগ্রাম-৫ আসনের বিএনপি নেতা মীর নাছির উদ্দিন, ফেনী-১ মিজানুর রহমান, ফেনী-৩ হাসান আহম্মদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আবু আসিফ আহম্মদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আবদুল্লাহ আল হেলাল, সৈয়দ আহম্মদ লিটন ও মো. বশির উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ মামুনুর রশিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ জেসমিন নূর বেবী, কুমিল্লা-৩ কে এম মুজিবুল হক, খাগড়াছড়িতে আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও রাঙামাটির অমর কুমার দে মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

খুলনা বিভাগ

খুলনা-২ আসনের এস এম এরশাদুর উজ্জামান, খুলনা-৬ এস এম শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা-১ মুজিবুর রহমান, ঝিনাইদহ-১ আবদুল ওয়াহাব, ঝিনাইদহ-২ আবদুল মজিদ, ঝিনাইদহ-৩ কামরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৪ আবদুল মান্নান ও সাতক্ষীরা-২ মো. আফসার আলী মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

রাজশাহী বিভাগ

নাটোর-১ আসনের নীরেন্দ্রনাথ সাহা, নাটোর-৪ আলাউদ্দিন মৃধা, পাবনা-৩ হাসাদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৩ আইনাল হক, নওগাঁ-৪ মো. আফজাল হোসেন, বগুড়া-২ আবুল কাশেম, বগুড়া-৩ আবদুল মুহিত,  বগুড়া-৪ মো. আশরাফুল হোসেন (হিরো আলম), বগুড়া-৬ এ কে এম মাহাবুবুর রহমান, বগুড়া-৭ মোরশেদ মিলটন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ শামসুল হুদা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ তৈয়ব আলী মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

বরিশাল বিভাগ

বরিশাল-২ আসনের আনিসুজ্জামান, পটুয়াখালী-১ মো. সুমন, পটুয়াখালী-৩ গোলাম মাওলা রনি ও মো. শাহজাহান মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

সিলেট বিভাগ

সিলেট-৩ আসনের কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট-৫ ফয়েজুল মনির চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ জোবাইর আহম্মেদ, হবিগঞ্জ-২ মো. জাকির হোসেন, হবিগঞ্জ-৪ মওলানা মো. সোলাইমান খান ও মৌলভীবাজার-২ মহিবুল কাদির চৌধুরী মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

আপিল করে মনোনয়ন ফিরে পেতে সোমবার নির্বাচন কমিশনে ভিড় জমান প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। আপিলের ব্যাপারে খোঁজ নিতে নির্বাচন কমিশনে যান কুড়িগ্রাম-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ছবি : ফোকাস বাংলা

রংপুর বিভাগ

রংপুর-৪ আসনের মোস্তফা সেলিম, ঠাকুরগাঁও-৩ এস এম খলিলুর রহমান, পঞ্চগড়-১ তৌহিদুল ইসলাম, পঞ্চগড়-২ ফরহাদ হোসেন আজাদ, জয়পুরহাট-১ মো. ফজলুল রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আবদুল খালেক, কুড়িগ্রাম-৪ মাহফুজার রহমান ও ইউনুস আলী, দিনাজপুর-১ পারভেজ হোসেন, দিনাজপুর-২ মোকাররম হোসেন ও দিনাজপুর-৩ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগ

ময়মনসিংহ-২ আসনের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ও এনামুল হক খান, ময়মনসিংহ-৩ আহম্মেদ তাইবুর রহমান, ময়মনসিংহ-৪ আবু সাঈদ মহিউদ্দিন, ময়মনসিংহ-৭ জয়নাল আবেদীন, ময়মনসিংহ-৮ এম এ বাশার, ময়মনসিংহ-১০ হাবিবুল্লাহ বেলালী, নেত্রকোনা-১ শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার, নেত্রকোনা-১ মো. রুবেল ইসলাম, জামালপুর-৪ ফরিদুল কবির তালুকদার, জামালপুর-৪ মামুনুর রশিদ ও শেরপুর-২ এ কে এম মোখলেছুর রহমান মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল : নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মানু মজুমদারের প্রার্থিতা বৈধ হলেও তাঁর বিরুদ্ধে আপিল করেছেন অপর প্রার্থী শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার। তিনি অভিযোগ করেন, মানু মজুমদার ঋণখেলাপি।

‘আগে ভুলভ্রান্তি সংশোধনের সুযোগ ছিল, কিন্তু এবার নেই’

আপিল শেষে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘কমিশন যেহেতু সরকারের আজ্ঞাবহ নয়, তাদের মেরুদণ্ড আছে, তাই আমি আশাবাদী, শুনানি শেষে আমার মনোনয়নপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

হলফনামায় নিজের স্বাক্ষর না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় গোলাম মাওলা রনির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হলফনামার অনুলিপিতে স্বাক্ষর না থাকা আমার ভুল ছিল। তবে এটা গুরুতর কোনো ভুল নয়। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলেছিলাম, সঠিক করে দেব। তবে তিনি তাতে রাজি হননি। আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। আগের নির্বাচনগুলোতে এ ধরনের ভুলভ্রান্তি সংশোধনের সুযোগ ছিল, কিন্তু এবার পেলাম না।’

‘বোঝাই যাচ্ছে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও সকালে ইসিতে এসেছিলেন। তিনি আপিল না করলেও খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এ সময় ইমরান বলেন, ‘যে অজুহাতে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না কারো মনোনয়ন টিকবে।’

নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘দেখা গেল ১ থেকে ২৯০০ নম্বরের ভোটার তালিকা আমি ২৮৯১ পর্যন্ত ঠিক দিলাম, পরে দেখা গেল ক্রমে ১৫৬ হয়তো দুবার এসেছে, দেখা গেল ১৫৮ না হয়ে ১৫৯ হয়েছে। এটা মাইনর ত্রুটি। সিইসি বলেছিলেন, এই মাইনর ত্রুটি গণনা করা হবে না। অথচ ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

ইমরান এইচ সরকার আরো বলেন, ‘দাখিলের সময় বলেছিলাম, আমি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্বাক্ষর দাখিল করতে চাই। যদি দু-একটা কম বেশি হয়। সেটা কিন্তু তারা নেয়নি। তাৎক্ষণিক সংশোধনের সুযোগ ছিল, সেটাও তারা আমাকে দেয়নি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’