মনোনয়ন বাণিজ্যের বহিঃপ্রকাশ ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা : এইচ টি ইমাম

Looks like you've blocked notifications!
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বুধবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি : এনটিভি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে মনোনয়ন  বাণিজ্য হয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়ি বহরে হামলায়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নির্বাচন পরিচালনার কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম এসব কথা বলেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার যে ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, ইতোমধ্যে আমাদের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন। এরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তৃণমূলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কাজেই বেছে বেছে তাদের ওপর এই আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবিহিত করেছি। 

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ইসির কাছে তো অন্যরা অন্যভাবে বিষয়গুলো বলেছেন। যেমন- বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তারা তো পুলিশকে খবর দিয়ে সেখানে যায়নি। পুলিশেরও জানা ছিল না। স্থানীয়ভাবে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশান অফিসে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের ওখানেও। ওখানে তাদের দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না।

এইচ টি বলেন, অথচ বিশেষ একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। এ রকম ভুল হওয়া উচিত না। এরকম খবর যাচাই-বাছাই করে নিলেই হয়। এখন তো খোঁজ-খবর নেওয়া সহজ।  কোনো একটিতে এ রকম ঘটলে অন্যরা প্ররোচিত হন। উৎসাহী হন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই সময়ে নানা রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য মিডিয়ার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এ ধরনের বিষয় যাতে যাচাই-বাছাই করে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। এমনভাবে পরিবেশন করে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে হত্যার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমাদের সাধারণ সম্পাদক যে বর্ণনা করলেন, তাতে যুবলীগ নেতা যাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমে তার চোখে মরিচের গুড়া দেওয়া হয়েছে। পরে তার মাথায় ইট দিয়ে থেতলে থেতলে মারা হয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে পরিশেষে তাকে গুলিও করা হয়েছে। এগুলো কোন ধরনের কাজ? এগুলোতে আমরা ২০১৩-১৪ তে যেরকম দেখেছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর লোকেদের দেখেছিলাম। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যত সহিংসতা হচ্ছে সেগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বেশি হচ্ছে। নোয়াখালী ও ফরিদপুরে আমাদের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছে। মাহী বি. চৌধুরী গাড়ির বহরের ওপর গাড়ি হামলা- এটিই তার প্রমাণ। মহাজোটের অন্যান্য সহযোগীদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে।

এইচ টি ইমাম বলেন, এ ছাড়া পটুয়াখালী, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, মেহেরপুরের গাংনী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নরসিংদী জেলায় আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। এগুলো নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদেরকে আমরা অনুরোধ করেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ইসির কর্তৃত্বাধীন। আপনারা তাদেরকে ব্যবহার করুন, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব বা ব্যর্থতা দেখছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের এইচ টি ইমাম বলেন, এটা ব্যর্থতা বলব না। তাদেরই আমরা সতর্ক করলাম। তাদেরকে আমরা বলেছি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এখন তো চিহ্নিত করা সহজ। এখন তো এসব ঘটনার ছবি পাওয়া যায়। তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।

নির্বাচন কমিশন থেকে আপনাদের কি ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে-এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এসব বিষয়ে তাদেরকে আমরা যখন জানালাম। এসব ঘটনা তারা জানতেনও না। আমরা জানানোর পর তারা (ইসি) বলেছেন, ব্যবস্থা নিবেন। এখন আমরা দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয়।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে- এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, আমি বলব নির্বাচন কমিশন এখনও যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তারা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন- আমরা বৃহত্তর দল যাতে তাদের সহযোগিতা করি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমরাই যদি আক্রান্ত হই, তাহলে আমাদেরকে রক্ষা তো আপনারাই (ইসি) করবেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব আপনারা পালন করুন। কমিশন বলেছে, এ বিষয়গুলো তারা দেখছেন। এখন থেকে সবাইকে আরো সতর্ক হওয়ার জন্য নির্দেশ দিবেন।