ইশতেহারে ১৮ দফা

জাপা এলে ৩৮০ আসনের সংসদ, থাকবেন সংখ্যালঘুরাও

Looks like you've blocked notifications!
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। আজ শুক্রবার দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বনানীর কার্যালয়ে ইশতেহারটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, জাপা ক্ষমতায় এলে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে ৩০টি আসন রাখা হবে। এর জন্য সংসদে থাকবে ৩৮০টি আসন। এ ছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করা হবে এরশাদ সরকার ক্ষমতায় এলে। 

নির্বাচনে জয়ী হলে জাপা কী করবে, তার ১৮ দফা তুলে ধরেছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। এ ছাড়া ইশতেহারে দফাগুলো পূরণে সময়সীমাও বলা হয়েছে।

জাপার ইশতেহারের ১৮ দফা তুলে ধরা হলো :

১. প্রদেশিক ব্যবস্থার প্রবর্তন

দেশে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। দেশের আটটি বিভাগকে আটটি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। দুই স্তরবিশিষ্ট কাঠামো থাকবে শাসন ব্যবস্থায়।

২. নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। সন্ত্রাস, অস্ত্র, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করা হবে।

৩. পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন

উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করে ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপজেলা ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেওয়া হবে ৷ জাতীয় পার্টি সুযোগ পেলে এক বছরের মধ্যে এটি নিশ্চিত করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট শূন্যের কোঠায় আনা হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলার প্রবণতা বন্ধ করা হবে।

৫. ধর্মীয় মূল্যবোধ

ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার ওপরে স্থান দেওয়া হবে। সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করা হবে। এক বছরে এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৬. কৃষকের কল্যাণ সাধন

কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল ও কীটনাশক সরবরাহ করা হবে। কৃষি উপকরণের কর শুল্ক মওকুফ করা হবে। এ ছাড়া কৃষকদের বিরুদ্ধে কোনো সার্টিফিকেট মামলা করা হবে না। সহজ শর্তে কৃষিঋণ সরবরাহ করা হবে।

৭. সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা কোনো কঠিন কাজ নয়, সরকারের সদিচ্ছা যথেষ্ট। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে তিন মাসে এসব নির্মূল করবে।

৮. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য স্থিতিশীল করা হবে। সারা দেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। উত্তরবঙ্গের শিল্পায়ন ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনগ্রসর অঞ্চলে শিল্পায়ন ব্যবস্থা চালু করা হবে।

৯. ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না

জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে শিল্প প্রতিষ্ঠা ব্যতীত আবাসিক স্থাপনা গঠনে কৃষিজমি বা ফসলি জমি নষ্ট করা প্রতিরোধে আইন গড়ে তোলা হবে।

১০. শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধন

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে। শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমানো হবে। সুলভ মূল্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

১১. স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ

ইউনিয়নভিত্তিক সেবা খাত উন্নত করা হবে। প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা হবে।

১২. খাদ্য নিরাপত্তা

খাদ্যে ভেজাল কিংবা বিষাক্ত দ্রব্য মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে।

১৩. শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন

হরতাল অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হবে। শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন করে সত্যিকারের গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো হবে।

১৪. সড়ক নিরাপত্তা

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাস্তাঘাট সংস্কার করা হবে। প্রয়োজনীয় রাস্তায় ৫০ ভাগ প্রশস্ত করা হবে।

১৫. গুচ্ছগ্রাম ও পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা

গুচ্ছগ্রাম ও পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

১৬. পল্লী রেশনিং পদ্ধতি চালু করা হবে

পল্লী অঞ্চলের মানুষের ন্যূনতম অন্নের সংস্থান নিশ্চিত করতে পল্লী অঞ্চলে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। এক বছরের মধ্যে রেশনিং ব্যবস্থায় চাল, ডাল, তেল, চিনি পৌঁছে দেওয়া হবে।

১৭. শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন

দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অঞ্চলে অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্পঋণ সহজলভ্য ও নতুন শিল্প স্থাপন করা হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

১৮. ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা

সাধারণ নির্বাচন বাদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে সংসদের মোট আসন ৩৮০টি করা হবে। তাদের জনসংখ্যার হার অনুসারে চাকরি ও শিক্ষার হার নিশ্চিত করা হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করা হবে।