কিশোরগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের তমালতলা এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনসহ সব আসনে নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। আজ দুপুর ১২টায় জেলা শহরের তমালতলা এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরুর পর থেকেই গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের এবং হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে একের পর এক সহিংস আচরণ ঘটার পর লিখিত প্রতিকার চাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

এর মধ্যে গত ১৮ নভেম্বর ভৈরব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অতর্কিত হামলায় ১২ জন কর্মী আহত হয়। পাঁচ-সাতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ উল্টো বিএনপির ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ৩৫০ জনকে আসামি করে ভৈরব থানায় মামলা করা হয়। ওই মিথ্যা মামলার কারণে আতঙ্কিত হয়ে বর্তমানে শত শত নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় ২০ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এরপর গত ১২ ডিসেম্বর কুলিয়ারচর উপজেলার ওসমানপুর চৌমুড়ি এলাকায় বিএনপির সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পথসভায় পুলিশের ছত্রছায়ার ছাত্রলীগ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। হামলা চলাকালে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক ও এসআই এহসানুল হক হাতে থাকা হকিস্টিক দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের পা ও পিঠে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন। এ ছাড়া হামলায় আরো অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর হামলায় জড়িত অভিযুক্ত দুই এসআইকে প্রত্যাহারসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে কিশোরগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন জানানো হয়। একই দাবিতে ১৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অপর একটি লিখিত আবেদন জানানো হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের বলা হয়, উল্লেখিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে অভিযুক্ত দুই এসআইকে প্রত্যাহার, ক্যাম্প ভাঙচুর, পোস্টার ছেঁড়া, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদান ও হয়রানি বন্ধসহ ৮২টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন জানানো পরও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, জেলার সব কটি সংসদীয় আসনেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর চলছে একই কায়দায় গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের, হুমকি প্রদর্শন, অফিস ভাঙচুর ও বন্ধ করে দেওয়ার মতো সহিংস আচরণ। গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে পাঁচজনসহ জেলায় এ পর্যন্ত ৮৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের স্বার্থে মাজহারুল ইসলাম আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অভিযুক্ত কুলিয়ারচর থানার দুই এসআইকে প্রত্যাহার, দমন-পীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ জেলার সব নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. আমিরুজ্জামান, সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক খালেদ মো. সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম, ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাকসহ বিপুল বিএনপির নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল।