নওগাঁয় পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীদের

Looks like you've blocked notifications!
বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জেলার ছয়টি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হক সনি। ছবি : এনটিভি

নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে পুলিশের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, ফোন করে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নওগাঁ জেলা বিএনপি। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জেলার ছয়টি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হক সনি।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু, নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনে বিএনপির প্রার্থী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির ও নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) আসনে বিএনপির প্রার্থী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল হক বেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, শফিউল আজম রানা, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হামিদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হক সনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করতে দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করতে শুরু করছে। গত ১০ দিনে (১০ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) গায়েবি মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য রাতের বেলা তাঁদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা না চালানোর জন্য কিছু পুলিশ সদস্য ফোন করে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে।

নজমুল হক সনি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশকে রাজনৈতিকভাবে উত্তেজিত করার জন্য ছয়টি নির্বাচনী আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প (অফিস) ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রচারণা শুরুর পর এ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীদের প্রায় ৭০টি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের লোকজন বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে। এসব বিষয়ে বারবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সব ধরনের গ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে এবং তদন্ত করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারী ও বিএনপির প্রচার ক্যাম্প ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁ-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর কবির অভিযোগ করেন, সরকারি দলের নৌকা প্রার্থীর লোকজন তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের কোনো পোস্টার টাঙাতে দিচ্ছে না। মাইকে প্রচার কাজ চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। গত ৯ ডিসেম্বর আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তছলিম উদ্দিনসহ তাঁর ছয়জন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গায়েবি মামলায় কোনো প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই আমার সাতজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে না নামার জন্য নেতাকর্মীদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছে নওগাঁ সদর থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে এটা আমরা জানি। তারপরও প্রশাসন যাতে কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ না করে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয় এমন পদক্ষেপ চাই।’

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাশিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ ফোন করে কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে- এ ধরনের অভিযোগ সঠিক হওয়ার কথা নয়। তারপরেও কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কাউকে হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা হচ্ছে না। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, শুধু তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত দুই-তিন দিনে প্রার্থীদের বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’