যশোরে পুলিশের পাহারায় কাজ করছেন বিদেশিরা

Looks like you've blocked notifications!

যশোর শহর থেকে আজ রোববার সকালে চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুরে যান জাপানভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার চার কর্মী। তাঁরা সেখানে আর্সেনিক নিয়ে কাজ করছেন অনেক দিন ধরে। এত দিন মুক্তভাবে চলাচল করলেও জাপানি ওই চার নাগরিককে আজ রোববার পুলিশ পাহারা দিয়েছে।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাপানি নাগরিকরা যত সময় চৌগাছা এলাকায় থাকবেন, তত সময় পুলিশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’

কেবল জাপানি নয়, জেলায় কর্মরত অন্য বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই মুহূর্তে যশোরে ২৪ জন বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশের এসব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চারদিনের ব্যবধানে ঢাকায় ইতালীয় ও রংপুরে জাপানি নাগরিক খুনের ঘটনার পর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগগুলোর জেলাপর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে একের পর এক নির্দেশনা আসতে শুরু করেছে। প্রশাসনও দফায় দফায় খতিয়ে দেখছে, বিদেশিদের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি আছে কি না। এ ছাড়া বিদেশি নাগরিকরা কে কখন কোথায় যাতায়াত করছেন, তাও নজরদারি করা হচ্ছে।

পুলিশ প্রশাসন থেকে জানা গেছে, যশোরে বর্তমানে ২৪ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাঁরা চাওয়া মাত্রই তাঁদের পুলিশি প্রহরা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আজ সকালে বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে ১৭ জন জাপানি নাগরিক যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর গুজব রটে যায়, যশোর থেকে জাপানি নাগরিকরা ভয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছেন। পরে ইউএস বাংলার যশোর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার ফ্লাইটে যে ১৭ জন জাপানি নাগরিক ঢাকা ফিরেছেন, তাঁরা সবাই পর্যটক ছিলেন। প্রায় এক মাস আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ট্যুর প্ল্যান নামের একটি পর্যটক সংস্থা তাঁদের টিকিটের ব্যবস্থা করেছিল। আজ তাঁদের ঢাকায় ফেরার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত ছিল।’

আজ দুপুরে জাপানের টোকিওভিত্তিক একটি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ‘কোকুসাইবিজ ইনকরপোরেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়োইসি সিবাটার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাতক্ষীরা থেকে সড়কপথে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকা ফিরছিলেন তিনি। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য যশোর প্রেসক্লাবের ক্যাফেতে আসেন। সিবাটা ভালো ইংরেজি বলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভত আরেক জাপানি রফিকুল আলম।

সিবাটা জানান, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর প্রতিষ্ঠান কোকুসাইবিজের এখন মূলধন ১০ মিলিয়ন ইয়েন। জাপান, চীন, কোরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে তাঁর প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, বাস্তবায়ন পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলোতে সেবা প্রদান করে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আর্সেনিক কর্মসূচির পরামর্শক হিসেবে কয়েকদিন আগে তিনি সাতক্ষীরা এসেছিলেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে সিবাটা জাপানি নাগরিক হত্যার প্রসঙ্গটি তোলেন। কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিবাটা বলেন, ‘আমি কনফিউজড, তবে মনে করি না আইএস (আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট) এ কাজ করেছে।’

এতে আপনারা আতঙ্কিত কি না জিজ্ঞেস করলে সিবাটা বলেন, ‘মোটেই না। তারপরও দূতাবাস থেকে সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া জাপানে আমাদের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। একজন জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে শুনে তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।’ সিবাটার সঙ্গে আসা রফিকুল আলম বলেন, ‘আতঙ্ক নয়, কাজ শেষ। আজই ঢাকায় ফেরার কথা ছিল, তাই ফিরছি।’