পঞ্চগড়-২ আসনে অভিজ্ঞের সঙ্গে নবীনের লড়াই
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন ও বিএনপির প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।
বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ আসনটি একসময় আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দখলে ছিল। ১৯৯১ সালে আটদলীয় জোটের সিপিবির প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. মোজাহার হোসেন। ১৯৯৩ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোজাহার হোসেন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোজাহার হোসেনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন।
বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নুরুল ইসলাম দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। ১০ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে নুরুল ইসলাম এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজস্ব ধারায় সুসংগঠিত করেছেন দলকে। এ ছাড়া তাঁর আমলে স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় হওয়া ও গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের ভোট বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারও তিনি জয়ী হবেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশা জানিয়ে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও এলাকার মানুষ আমাকে জয়যুক্ত করবেন। আমি নির্বাচিত হলে আমার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব এবং পঞ্চগড়ের উন্নয়নে আমার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।’
পঞ্চগড়-২ আসনের নতুন মুখ হিসেবে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ। বিএনপির হারানো আসনটি ফিরে পেতে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঐক্যবদ্ধ বিএনপির শক্ত প্রার্থী ও তরুণ নেতা হিসেবে ফরহাদ হোসেন আজাদ সহজেই জয়লাভ করবেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘মানুষ গত দুই নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে ভোট দিতে পারেনি। আমি দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে কাজ করছি। দলকে সুসংগঠিত করেছি। মানুষ পরিবর্তন চায়, নিরাপত্তা চায়, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায়। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সরকারদলীয় প্রার্থীরা এখনো সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সাংসদের ভালো-মন্দ দিক বিবেচনা করে ভোটাররা তাঁদের রায় দেবেন। বর্তমানে সারা দেশে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে। আমাদের নেত্রী, আমাদের মা জেলে। তাঁর মুক্তির জন্য, ধানের শীষের বিজয়ের জন্য সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
পঞ্চগড়-২ আসনের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুঁই (হুক্কা), জাতীয় পার্টির বোদা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক লুৎফর রহমান রিপন (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির বোদা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম (কাস্তে), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফয়জুর রহমান মিঠু (আম) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কামরুল হাসান প্রধান (হাতপাখা)।
দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৩৫১ ও নারী ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৪।
এই আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩১টি, ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৫০টি ও নতুন ভোটারের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৬২।