খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক গ্রেপ্তার

Looks like you've blocked notifications!
খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিক মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্যাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ছবি : এনটিভি

নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সঠিক ও তথ্যভিত্তিক না হওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খুলনার সাংবাদিক মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্যাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আগামীকাল বুধবার তাঁর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্যা ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি। মামলার অপর আসামি মানবজমিনের খুলনা প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলামকে খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে খুলনা প্রেসক্লাব। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেন মোল্যার মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরীর দায়ের করা ডিজিটাল আইনের মামলায়  আজ মঙ্গলবার ৩টার দিকে হেদায়েৎ হোসেন মোল্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন খুলনা-১ আসনের ফল ঘোষণায় প্রথমটিতেই মোট ভোট সংখ্যার চেয়ে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল। সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেন মোল্যা তখন বিষটি রিটার্নিং কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এক ঘণ্টা পর রিটার্নিং কর্মকর্তা পুনরায় সংশোধনী ফলাফল ঘোষণা করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রথম ঘোষণার পর এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউন। খবরটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর আবার তা প্রত্যাহার করে নেয় অনলাইন নিউজ পোর্টালটি। তবে হেদায়েৎ হোসেন মোল্যার পাঠানো প্রতিবেদনটি ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে পরের দিন ছাপা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি হেদায়েৎ হোসেন মোল্যা ও মো. রাশিদুল ইসলাম পরস্পরের যোগসাজসে ৯৯ নম্বর সংসদীয় আসন খুলনা-১ এর সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন পত্রিকা এবং দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার অনলাইনসহ দৈনিক পত্রিকায় মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও লিখেছে, ‘খুলনা-১ : মোট ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে।’ যাহা একটি মিথ্যা তথ্য, যা জনমনে বিভ্রান্তি, অস্থিতকর, বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টিসহ স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার অশুভ প্রয়াস।

ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবাশীষ চোধুরী মামলার এজাহারে লিখেছেন, ‘আমার ধারণা, উক্ত আসামিদ্বয় বটিয়াঘাটা উপজেলা কম্পাউন্ডের মধ্যে যেকোনো স্থানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস/ল্যাপটপ ব্যবহার করিয়া উক্ত সংবাদ অনলাইনে প্রকাশ করেন। এভাবে অনলাইনে ও পত্রিকার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে আসামি মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্যা ও মো. রাশিদুল ইসলাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৫/৩১/৩৩/৩৫ ধারায় অপরাধ করেছেন।’

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের নির্দেশে মামলাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।

খুলনা জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, রোববার খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে মোট ভোটারের চেয়ে ২২ হাজারের বেশি ভোট পড়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউন ও মানবজমিন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বাদী হয়ে সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেন মোল্যা ও মো. রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।