আনন্দের পরিবর্তে আতঙ্কে ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী পরিবার

Looks like you've blocked notifications!
মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ বি এম কিবরিয়া ময়নুল। ছবি : এনটিভি

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের পর আওয়ামী পরিবারের লোকজন যখন আনন্দ ও বিজয় উৎসবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তখন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিরাজ করছে আতঙ্ক। নিজ দলের প্রতিপক্ষের লোকজন একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

আজ মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি এ বি এম কিবরিয়া ময়নুল এসব অভিযোগ করেন। অথচ গত রোববারের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন।

ময়নুল অভিযোগ করে বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগ পরিবার আজ নিরাপত্তাহীন। ক্ষমতাসীন দলের হয়েও একজন সংসদ সদস্যের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ পৌঁছে দেওয়া এবং প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন এ বি এম কিবরিয়া ময়নুল।

ময়নুল বলেন, সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল। পরে দল তাঁকে মনোনয়ন না দিলেও তিনি নৌকার পক্ষে দিনরাত কাজ করেন। মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যার ধারাবাহিকতায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

ময়নুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরকালে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশফাকুল ইসলাম সাব্বিরকে প্রাণনাশের হুমকির নালিশ করা হয়। একই ঘটনায় পরবর্তী সময়ে সাব্বিরের মা মনোয়ারা বেগম সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে এবং নৌকার বিজয়ে কাজ করতে সাব্বির গত ১ ডিসেম্বর দেশে এলে বিভিন্নভাবে আবারও হত্যা ও হামলার হুমকি দেওয়া হয়।

গতকাল সোমবার ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ বি এম কিবরিয়া ময়নুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি : এনটিভি

‘এতকিছুর পরও সাব্বিরসহ ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এরপরও নির্বাচন পর্যন্ত হুমকি-ধমকি অব্যাহত ছিল। কিন্তু নির্বাচন শেষ হতেই পরের দিনই হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে’, যোগ করেন ময়নুল।

এ বি এম কিবরিয়া ময়নুল আরো অভিযোগ করেন, ‘গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশফাকুল ইসলাম সাব্বির ও ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুলের বাড়ি কে এম টিলায় আক্রমণ করা হয়। পরে কায়স্থগ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে হামলা হয়। এ সময় ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা। হামলায় ময়নুলের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা ও ছোট ভাই এনামুল করিম আহত হন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিজিবি ও পুলিশের কর্মকর্তারা হামলাস্থলগুলো পরিদর্শন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমদ শাহ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজান আহমদ শাহর শরিফগঞ্জের বাড়িতে শতাধিক সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলা চালায়।

নির্বাচনের দিন রাতে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবেলের ওপর মাইজগাঁও বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে হামলা চালানো হয়। বর্তমানে তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কঠালপুর বাজারে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মফিজুর রহমানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে হামলা চালানো হয়। এ সময় ভাঙচুরের পাশাপাশি দোকানের মালামাল লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব ঘটনায় ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সবাই পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের এসব ঘটনার পেছনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর নির্দেশ রয়েছে বলে দাবি করে এ বি এম কিবরিয়া ময়নুল বলেন, তাঁর হুকুমে মাইজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আকরাম আলীর নেতৃত্বে শতাধিক অস্ত্রধারী এসব হামলা চালাচ্ছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।