নওগাঁ থেকে কে হচ্ছেন মন্ত্রী?

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম (বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এরই মধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। আর আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ নেওয়ার কথা। এবারের মন্ত্রিসভায় নওগাঁ থেকে কে হচ্ছেন মন্ত্রী? নওগাঁর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এ আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর ছয়টি সংসদীয় আসনের সাংসদদের মধ্য থেকে মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন অন্তত তিনজন সাংসদ। এদের মধ্যে একজন চারবারের সাংসদ নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের শহীদুজ্জামান সরকার এবং তিনবারের সাংসদ নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদার ও নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের ইসরাফিল আলম।

মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এবার জোর আলোচনায় রয়েছেন নওগাঁ-১ আসনের সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি দশম সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এবার তিনি নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন- এমন গুঞ্জন চলছে তাঁর নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচনের পর সাধন চন্দ্র মজুমদারকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়ে তাঁর সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ-১ আসন থেকে টানা তৃতীয় বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন। নওগাঁ-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দুইবারের সাংসদ ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে ৪৫ হাজার ২৩৪ ভোটে পরাজিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবেদ হোসেন বলেন, ‘সাধন দা একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তারপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সবশেষে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিত। তাঁকে এবার আমরা মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই।’

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসন থেকে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার ওরফে বাবলু সারকার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি টানা তৃতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ১৯৯১ সালে ওই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী সামসুজ্জোহা খানকে ৭১ হাজার ৪৬৬ ভোটে পরাজিত করেন। গত সংসদে শহীদুজ্জামান জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে মন্ত্রিসভায় দেখতে চায় এলাকাবাসী।

ধামইরহাট এমএম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদুজ্জামান সরকার চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এলাকায় এবং জাতীয় রাজনীতিতে একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে পরিচিত এবং তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। মন্ত্রিসভায় থাকার মতো সব ধরনের যোগ্যতা তাঁর রয়েছে। এসব বিবেচনায় এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এবার তাঁকে মন্ত্রিসভায় দেখতে চাই।’

নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনের টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বলে জোর আলোচনা রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ইসরাফিল আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি থেকে তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির। আলমগীর কবিরকে বিএনপির ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এবারের নির্বাচনে ইসরাফিল আলম ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭১৪ ভোটে পরাজিত করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় ইসরাফিল আলমে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘রাণীনগর-আত্রাই এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। ইসরাফিল সাংসদ হওয়ার পর এ এলাকা শান্তির জনপদ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁকে এবার আমরা মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।’

এই তিনজন ছাড়াও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকও নতুন মন্ত্রিসভায় আবারও সদস্য হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন থেকে সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ১০ বার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে সাতবারই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদকও পেয়েছেন নওগাঁ-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য।