সবার ভালোবাসা নিয়ে চিরনিদ্রায় সৈয়দ আশরাফ

জীবনে অনেকে অনেক কিছু সঞ্চয় করেন, তবে আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজের অজান্তেই সঞ্চয় করেছিলেন মানুষের ভালোবাসা। তাই তো তিন জেলায় তিনটি জানাজায় অংশ নিতে ঢল নামে লাখো মানুষের। সেই ভালোবাসা নিয়ে আজ রোববার বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।
আজ বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বনানী কবরস্থানে এসে পৌঁছায়। দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চিরবিদাই জানাতে উপস্থিত হন বনানী কবরস্থানে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সর্বস্তরের নাগরিক, রাজনৈতিক সহকর্মী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দসহ বিপুল শুভাকাঙ্ক্ষী ও গুণগ্রাহীরা শরিক হন।
জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
প্রথমে মরহুমের কফিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দলের পক্ষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে মরহুমের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং পরিবারের পক্ষে তাঁর ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জে নেওয়া হয়।
কিশোরগঞ্জ থেকে এনটিভির প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ জানান, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার জেলা শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। সেখান থেকে দুপুর ১টায় মরহুমের মরদেহ দেশের বৃহত্তম শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে পৌঁছায়। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টানে নামাজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে পাঁচ একর আয়তনের বিশাল ঈদগাহ মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে মরহুমের জানাজা পড়ান স্থানীয় পাগলা মসজিদের ইমাম মুফতি মো. খলিলুর রহমান।
নামাজ শুরু হওয়ার আগে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ ও পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদের উপস্থিতিতে পুলিশের একটি চৌকশ দল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জানাজা শুরুর আগে দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সৎ, নির্লোভ, নিরংকারী ও পরোপকারী মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। পরে মরহুমের পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও চাচাত ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু জীবদ্দশায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভুল-ভ্রান্তির জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান। জানাজা শেষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এনটিভির ময়মনসিংহ প্রতিনিধি আইয়ুব আলী জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে অবতরণ করে। পরে হেলিকপ্টার থেকে মরদেহ আনা হয় কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে। সেখানে প্রথমে পুলিশের একটি দল তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়। দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে তাঁর জানাজা পড়ান ঈদগাহ মাঠ মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষসহ হাজারো মানুষের ঢল নামে।
জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সার্কিট হাউজ মাঠে। পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। এরপর আসরের নামাজের পর বনানী কবরস্থানে সৈয়দ আশরাফকে দাফন করা হয়।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক কন্যাসহ রাজনৈতিক সহকর্মী, বহু আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও নেতাকর্মী রেখে গেছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে থাইল্যান্ড থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমান বন্দরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গ্রহণ করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর ২১, বেইলি রোডে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাসভবনে নেওয়া হয়। এরপর মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখা হয়।