প্রথম আলোর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি খোকন আর নেই

Looks like you've blocked notifications!
দৈনিক প্রথম আলোর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি এনামুল হক খোকন। ছবি : সংগৃহীত

দৈনিক প্রথম আলোর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি এনামুল হক খোকন  (৫৮) আর নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৫৩ দিন লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন খোকন।

বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন খোকন। তাঁর মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সাংবাদিক ছাড়াও জেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর জেলা শহরে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলে করে শাহজাদপুরে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে উল্লাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন এনামুল হক খোকন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সিরাজগঞ্জের  খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন তাঁর চিকিৎসা চলে। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২৮ ডিসেম্বর তাঁকে ঢাকায় ছেলের বাসায় নেওয়া হয়।

খোকনের মেজ ছেলে শিবলী নোমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে তাঁর বাবার অবস্থার উন্নতি হয়। কিন্তু আজ সকালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এনামুল হক খোকন তাঁর মা, স্ত্রী, তিন ছেলে, এক ভাই ও পাঁচ বোন রেখে গেছেন।

ঢাকা থেকে এনামুল হক খোকনের মৃতদেহ প্রথমে আনা হয় সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে। সেখানে প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। আসরের নাম শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মৃতদেহ নেওয়া হয় জন্মভূমি শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছিতে। রাত ৯টায় তালগাছি ডিগ্রি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তালগাছি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এনামুল হক খোকনের বড় ছেলে নাজমুল হক বলেন, ‘আমার বাবা শুধু সাংবাদিকতা করেননি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে নিবিড়ভাবে সমাজ উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কোনো দলের ছিলেন না। তাঁকে সবাই ভালোবাসতেন। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের বড় ক্ষতি হলো।’ তিনি তাঁর বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সবার দোয়া চেয়েছেন।

দৈনিক সংবাদের সিরাজগঞ্জ জেলা বার্তা পরিবেশক প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এনামুল হক খোকন খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে খুব শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন। তাঁর লেখায় কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল না। তিনি সবার প্রিয়ভাজন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।

এনামুল হক খোকন ১৯৬০ সালের ২০ অক্টোবর শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আয়নুল হক সরকারী চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বগুড়া থেকে প্রকাশিক দৈনিক দুর্জয় বাংলা পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। তিনি দৈনিক বাংলাবাজার ও দৈনিক প্রথম আলোর শাহজাদপুর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে প্রথম আলো পত্রিকার সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পান।

এনামুল হক খোকনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিরাজগঞ্জ টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান,  এনটিভির সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম ইন্না, সাংবাদিক রহমত আলী, সিরাজুল ইসলাম শিশির প্রমুখ।