‘জেএমবির সামরিক প্রধান’ নিহত

তিন পুলিশ কর্মকর্তার তিন রকম ভাষ্য!

Looks like you've blocked notifications!
ধরা পড়ার পর জাবেদ। ছবি : এনটিভি

চট্টগ্রামে আজ মঙ্গলবার ভোরে ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণে’ নিহত হয়েছেন জাবেদ ওরফে তৌফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক। তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তিন পুলিশ কর্মকর্তা তিন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।urgentPhoto

পুলিশের ভাষ্যমতে, জাবেদ জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ প্রথমে জানান পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘একটি কক্ষ থেকে গ্রেনেড নিয়ে পুলিশকে দেওয়ার সময় জাবেদের হাতে সেটি বিস্ফোরিত হয়।’

এর পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শহিদুর রহমান বলেন, ‘অনন্যা আবাসিক এলাকায় যাওয়া মাত্র জাবেদের পলাতক সহযোগীদের কেউ একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে।’ 

আর সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধারের জন্য সে যায় (তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ)। ওইখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণে সে (জাবেদ) নিহত হয়।’

আজ মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে মহানগরীর অক্সিজেনের কুয়াইশ সংযোগ সড়কের একটি বাড়িতে জাবেদকে নিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধারে’ গেলে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইলিয়াস বলেন, ‘ওই বাড়ির একটি কক্ষ থেকে গ্রেনেড নিয়ে পুলিশকে দেওয়ার সময় জাবেদের হাতে সেটি বিস্ফোরিত হয়। এতে গুরুতর আহত জাবেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

জাবেদের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন সিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির  সামরিক শাখার প্রধান জাবেদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁর স্বীকারোক্তি মতে কুয়াইশ এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। অনন্যা আবাসিক এলাকায় যাওয়া মাত্র জাবেদের পলাতক সহযোগীদের কেউ একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। এতে জাবেদ গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ সময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়।’ 

বিষয়টিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলেও উল্লেখ করেছেন শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (জাবেদ) জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জীবিত থাকলে হয়তো আরো বেশি তথ্য পেতে পারতাম। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। একই সংযোগের আরো আসামি আছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে আশা করি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নিহত জাবেদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি এলাকায়। 

একই ব্যাপারে এনটিভির সঙ্গে কথা বলেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘জাবেদকে জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ও গ্রেনেডের সন্ধান দেয় সে। তা উদ্ধারের জন্য সে যায় (তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ)। ওইখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণে সে (জাবেদ) নিহত হয়।’

ল্যাংটা ফকির হত্যা ও ডাকাতির সঙ্গে যোগসূত্র
সিএমপিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার শহিদুর রহমান জানান, জাবেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক সুজন বাবু গত ৪ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী বাংলাবাজার এলাকায় ল্যাংটা ফকির ও তাঁর খাদেম হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সুজন বাবু পুলিশকে জানিয়েছে, ল্যাংটা ফকির ইসলামবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত। ইসলাম ও শরিয়তবিরোধীদের খুন করলে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়- এ ধারণা থেকে ল্যাংটা ফকিরকে খুন করা হয়েছে। আর তার সহযোগী দেখে ফেলায় তাঁকেও খুন করা হয়। হত্যা করে যাওয়ার পর গ্রেনেড বিস্ফোরণ করার কথাও স্বীকার করেছে সুজন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থের জোগান দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদরঘাটে সাহা করপোরেশন নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিনতাই ঘটনায় অংশ নেয় জেএমবির আট সদস্য। ছিনতাইয়ের সময় তারা এলাকাবাসীর প্রতিরোধে পড়ে। এ সময় হাত গ্রেনেড বিস্ফোরণে তাঁদের দুই সদস্য মারা যায়।

এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, সদরঘাটে ছিনতাই ঘটনার সময় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও ফেলে যাওয়া অস্ত্রের সঙ্গে গতকাল সোমবার উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডের মিল পাওয়া গেছে।

তবে সাহা করপোরেশনে ঘটা ওই ঘটনার পরই পুলিশ দাবি করে, সাত-আটজনের ডাকাতদল সাহা করপোরেশনে ডাকাতি করতে আসে। ১৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ডাকাতরা গুলি ও ককটেল ফাটিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে নিজেদের ককটেলের বিস্ফোরণে দুই ডাকাত সদস্য নিহত হয়। এ ব্যাপারে সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মর্জিনা বেগম জানিয়েছিলেন, ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি চালালে সাহা করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সত্য গোপাল ভৌমিক, অফিস সহকারী বাবুল দাশসহ সাতজন আহত হন।

গতকাল সোমবার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে জেএমবির চট্টগ্রাম সামরিক শাখার প্রধান জাবেদ ও তাঁর সহযোগী কাজলকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। জাবেদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সন্ধ্যায় কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর আজিমপাড়ার লালমিয়া টাওয়ারের নিচ তলায় অভিযান চালানো হয়। পাঁচতলা ভবনের নিচতলা থেকে ফুয়াদ, মাহাবুব ও সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারার আগে তাদের আটক করা হয়। ওই কক্ষ থেকে ৯টি হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি পিস্তল, ১২০টি গুলি, ১০টি ধারালো অস্ত্র ও বেশ কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।