টিআইবি আর বিএনপির প্রতিবেদনে পার্থক্য নেই : তথ্যমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। ছবি : এনটিভি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ বলে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটি ‘প্রকৃতপক্ষে বিএনপি-জামায়াতের প্রতিবেদন’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ।

টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশের একদিনের মাথায় আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।  

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টির মধ্যে ৩৬টি আসনে বিরোধীদলের প্রচারে বাধা দানসহ ৪৪টি আসনে সরকারবিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা, পুলিশ বা প্রশাসন কর্তৃক হুমকি ও হয়রানি, প্রার্থী ও নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও কর্মী কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ভয়-ভীতি দেখানোর তথ্য পাওয়া যায়।

এ ছাড়া গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ১৯টি আসনে সহিংসতাসহ প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি, সরকারবিরোধী দলের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা, পুড়িয়ে দেওয়ার চিত্র দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসনের একাংশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে, যেটি আইনের লঙ্ঘন এবং নীতিবিবর্জিত। সর্বোপরি আংশিকভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। কারণ একদিকে সব রাজনৈতিক দল প্রার্থিতার মাপকাঠিতে নির্বাচনে ছিল, কিন্তু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয়তার বিবেচনায় বৈষম্য প্রকট ছিল। তা ছাড়া অনেকক্ষেত্রে ভোটারগণ অবাধে ভোট দিতে পারেননি। আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অবশ্যই ব্যাপকভাবে লজ্জাজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত। আর এসব কারণেই নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং বলা যায়, অভূতপূর্ব একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; যার ফলাফলও অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য হিসেবে আলোচিত হয়েছে।’

আজকের সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দেশে কয়েকটি সংগঠন আছে, যারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার কাজেই লিপ্ত থাকে। টিআইবি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং বলে যে, তাদের গবেষণাপ্রসূত প্রতিবেদন। আমরা অতীতেও দেখতে পেয়েছি, তারা যে গবেষণার কথা বলে, সেই গবেষণাগুলো প্রকৃতপক্ষে সঠিক কোনো গবেষণা নয়। বেশিরভার প্রতিবেদন হচ্ছে উদ্দেশ্যপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ, একপেশে এমনকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

পদ্মা সেতু নিয়ে টিআইবি মনগড়া কল্পকাহিনি সাজিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। পদ্মা সেতুতে যে দুর্নীতি হয়নি, সেটি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রমাণিত হয়েছে। কানাডার আদালতে মামলায় হেরে গেছে বিশ্ব ব্যাংক।’

‘এরপর টিআইবিসহ যেসব সংস্থা কল্পকাহিনি সাজিয়েছিল, তাদের উচিত ছিল ক্ষমা চাওয়া। এবং এই ধরনের মনগড়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা। এটি তারা করেনি।’

নির্বাচন নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন আর বিএনপির প্রতিবেদনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, টিআইবি, বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে মাত্র, অন্য কোনোকিছু নয়।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ‘যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন তাঁরা সবাই এই নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অনেক শান্তিপূর্ণ হয়েছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে।’