প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের পিটিয়ে পুলিশে দিলেন চিকিৎসকরা
গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত মঙ্গলবার ভর্তি হন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকার রিনা বেগম (২০)। এর দুদিন আগে মঠবাড়িয়ায় একটি ক্লিনিকে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। আর বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান রিনা।
রিনার স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে রিনার। বিষয়টি নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির ঘটনাও ঘটে। এরপরই শুরু হয় ভিন্ন ঘটনা। স্বজন হারানোর কিছুক্ষণ পরেই রিনার মা ও দুই ভাইকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখেন হাসপাতালের জরুরি সেবা কার্যক্রম। এখানেই শেষ নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করবে বলে শোকের মধ্যেই পুলিশ রিনার মা ও দুই ভাইকে আটক করে নিয়ে যায় থানায়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরই বিভাগের দুই গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ কারণে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে হাসপাতালের জরুরি সেবা। অন্যদিকে চিকিৎসকদের কথা, নিহত রিনার স্বজনরা তাঁদের গায়ে হাত তুলেছেন।
মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকার ফাইজুল মোল্লার স্ত্রী রিনা বেগমকে (২০) গত মঙ্গলবার ভোরে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে চিকিৎসকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, এ সময় রিনার স্বজনরা দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
ওসি সাখাওয়াত জানান, খবর পেয়ে অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর দুই ভাই ও মাকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়ায় রিনার তিন স্বজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি। তাঁরা হলেন রিনার মা হাসিনা বেগম (৫২), ভাই প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হাওলাদার (২৮) ও মো. মোস্তফা হাওলাদার (২২)।
রিনার ভাই প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হাওলাদার জানান, ৪ অক্টোবর মঠবাড়িয়ায় একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর বোন সন্তান প্রসব করেন। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার রিনাকে এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে শুরু থেকেই চিকিৎসকরা রোগীর তেমন কোনো খোঁজখবর নেননি।
জাকারিয়া আরো জানান, বুধবার গভীর রাতে বোনের অবস্থার অবনতি হলেও কোনো চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায়নি। সকালে বোনের মৃত্যুর পর চিকিৎসক এলে তাঁদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়।
জাকারিয়া বলেন, ‘এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০/২৫ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমাদের মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।’
তবে ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. আসিফ দাবি করেন, রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেছেন। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ফাহাব মাহিয়ান, শিহাব উদ্দিন ও নার্স মমতাজ বেগম আহত হয়েছেন। তিনি আরো দাবি করেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এখানে চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিল না।