সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : এনটিভি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে সরকার। ছোট-বড় বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নয়, সবাইকে দেশের নাগরিক হিসেবে ভাবতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে দেশের সমতলবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সব জনগোষ্ঠীর জন্যই শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এটাই চাই যে, শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে সবাই রাষ্ট্র পরিচালনায় আসবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। এবং আজকে এই যে ছোট্টো ছেলেমেয়েরা সবাই উপস্থিত। আমি এটাই চাই যে, আমাদের দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং দেশের সার্বিক কাজে তোমরা যারা এখানে ছোট্ট ছেলেমেয়ারা উপস্থিত, যারা বৃত্তি পেয়েছ, প্রত্যেকেই নিজেরা অবশ্যই অবদান রাখবে, এবং তোমরা নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে। পাশাপাশি নিজস্ব কিছু কাজ, নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা আছে, সেটাও তোমাদের বজায় রাখতে হবে।’

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশে কারোরই নিজেকে অবহেলিত ভাবার সুযোগ নেই দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মনে করলে চলবে না যে, আমরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা আমরা অবহেলিত, সেটা কেউ ভাবলে চলবে না। সকলকে ভাবতে হবে যে এই দেশের নাগরিক সবাই এবং প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার। সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে আমার বাংলাদেশে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে, আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই এবং এটা আমরা নিশ্চিত করব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) খলিলুর রহমান। বুয়েটের ছাত্র বরগুনার সাঁওতাল আদিবাসী মিয়াট বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।

নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সমতলবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

এ ছাড়া, সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের জীবন-মান উন্নয়ন, বৃত্তি উপকারভোগীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং প্রকল্পের নানা দিক সংবলিত কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ৫০০ শিক্ষার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার বৃত্তি দেওয়া হয়। বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বৃত্তি দেওয়া হয়।

এর মধ্যে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। আগামী বছর থেকে এই বৃত্তিপ্রাপ্তের সংখ্যা দুই হাজারে উন্নীত করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের এই অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিনসহ বিদেশি কূটনীতিকরা, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য তাঁর সরকার বৃত্তি দিচ্ছে এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সাধারণ জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে সাধারণ বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে প্রায় দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন ট্রেডে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পেশাকে ধরে রেখে এর সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো কাজের একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যগত গুরুত্ব রয়েছে। সেই গুরুত্বটা আমাদের দিতে হবে। যার যার পেশাকে ধরে রেখে এর আধুনিকায়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে।’

‘বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩০ লাখ ৮৭ হাজার। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ১৫ লাখ সমতলে বসবাস করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বৈচিত্র্যের মাঝেই ঐক্য হচ্ছে- বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক উজ্জ্বলতম বৈশিষ্ট্য। এই যে নানা মানুষ, নানান ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস- সবকিছু মিলে যে বৈচিত্র্য এটা কম দেশেই পরিলক্ষিত হয়।’

তাঁর সরকার দেশের সব জনগোষ্ঠী এবং শ্রেণি-পেশার জনগণের উন্নয়নের সমতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘ শিক্ষা-দীক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেন আমাদের সব জনগোষ্ঠী সমান সুযোগ পায়, কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, কেউ যেন দূরে পরে না থাকে-সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং এ জন্য আজকের এই বৃত্তি প্রদানের অনুষ্ঠান।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরিধান করে বৃত্তির চেক নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসায় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনে সবাই আনুষ্ঠানিক পোশাক পরবে সেটা স্বাভাবিক তবে, নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তাও মাঝে মাঝে প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়েছে। তাতে আমাদের দেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির যে বৈচিত্র্য তাও মেলে ধরার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সরকার প্রদত্ত বৃত্তিসহ নানা সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করে নিজেদের যোগ্য নাগরিকরূপে গড়ে তোলা এবং দেশ পরিচলনার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি চাই সঠিকভাবে লেখাপড়া শিখে তোমরা নিজেদের যোগ্য রূপে গড়ে তুলে রাষ্ট্র পরিচালনায় এগিয়ে আসবে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তোমরা অবদান রাখবে। পাশাপাশি নিজস্ব স্বকীয়তাটাও তোমরা বজায় রাখবে।’

শেখ হাসিনা পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনে বাংলার জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আবার তারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার গঠন করে দেশসেবার সুযোগ দিয়েছে।’

সমতলের ৫৫টি জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্মসূচিটি বন্ধ করে দেয় এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে এটি চালু করে এবং তা অদ্যবধি অব্যাহত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ কর্মসূচির আওতায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০০ বৃহৎ আকারের আয়বর্ধনমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।