‘জাতীয় নির্বাচনের মতো সিটি ভোট’ প্রতারণার ইঙ্গিত
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রতারণার ইঙ্গিত।’
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সিইসির এমন বক্তব্য দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার গভীর নীলনকশা। একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রেখেছে। ভোটের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
‘শুধু তাই নয়, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশের কারাগারগুলোতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মহা ভোট ডাকাতির আয়োজক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জাতির সঙ্গে আবারও একটি প্রতারণা করার ইঙ্গিত।’
এ সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মহাজোটের শরিক জাসদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তা নিয়ে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের কী জবাব দিবেন, কেননা তাদের শরিক জাসদ বলেছে ২৯ তারিখ রাতেই ব্যালটবক্স ভরা হয়।’
‘খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে’
রিজভী আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যেন লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে। পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নিম্ন আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে। এমন করে পার হয়ে গেছে একটি বছর।
‘যেসব মামলায় অন্যরা জামিনে রয়েছেন, সেখানে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে সরকারের নির্দেশে।’
রিজভী আহমেদ আরো অভিযোগ করেন, ‘কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুটি মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। মামলা দুটির মধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্ট গত ২৭ জানুয়ারি দেশনেত্রীকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ জামিন মঞ্জুর করা হয়। অপর মামলায় জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুরের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বিলম্বিত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।’
‘বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই মামলায় ৭৭ আসামির মধ্যে এরই মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। পাঁচজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৯ জনের সবাই জামিনে আছেন, শুধু দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া,’ যোগ করেন রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ, চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, তাঁর পা ফুলে গেছে। অথচ তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। কিছুদিন ধরে নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের নিচতলায় ছোট্ট একটি কক্ষে অস্থায়ী কাঙ্গারু আদালত সাজিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে টেনে এনে জোর করে বিভিন্ন মামলায় শুনানি করা হচ্ছে। আমাদের আহ্বান, এবার ক্ষান্ত দেন। একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক নেত্রীর ওপর জুলুম করবেন না। একটি বছর কারারুদ্ধ করে রেখে অত্যাচার করেছেন, এবার মুক্তি দিন। ইতিহাস পড়ুন, ইতিহাস বড় নির্মম। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’
এ সময় খালেদা জিয়া ও দলের কেন্দ্রীয় ১৮ নেতাসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, আবদুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।