ফেব্রুয়ারিতে ফরিদপুরের ফুল

Looks like you've blocked notifications!
ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে জনপ্রিয় কাটফ্লাওয়ার জারবেরাসহ বিভিন্ন নামীদামি ফুলের চাষ। ছবি : এনটিভি

ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে জনপ্রিয় কাটফ্লাওয়ার জারবেরাসহ বিভিন্ন নামীদামি ফুলের চাষ।

বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের বিভিন্ন দিবসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুলচাষিরা এখন রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেকোনো ফুলের দোকানে গেলে সহজেই সবার নজর কাড়ে ফরিদপুরের চাষ করা বাহারি রঙের জারবেরা, গ্ল্যাডিয়াস, গোলাপ, গাঁদা, গন্ধরাজসহ বিভিন্ন বাহারি ফুল। ফরিদপুরের চাহিদা মিটিয়ে ফুল যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চমূল্যের জারবেরাসহ অন্যান্য ফুল চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ তাঁদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জারবেরা বাণিজ্যিক ফুল। বাণিজ্যিকভাবেই এই ফুলের চাষ শুরু করেছেন ফরিদপুরের সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধরডাঙ্গীর কৃষক লিয়াকত হোসেন। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি করা সাত হাজার চারা ভারতের পুনে থেকে আমদানি করে চাষ শুরু করেছেন এই কৃষক। পলি শেড, জমি তৈরি ও আমদানি করা চারাসহ সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে ২১ লাখ টাকা। বর্তমানে ৫০ শতাংশ জমিতে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, ম্যাজেন্টা, কমলা রঙের জারবেরা ফুল শোভা পাচ্ছে।

এ বিষয়ে লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমি বেকার ছিলাম, তেমন কিছু করতে পারছিলাম না। হঠাৎ আমার এক বড় ভাই আমাকে জারবেরা ফুল চাষ করার জন্য বলেন। আমিও তাঁর কথামতো ভারতের পুনে থেকে এর চারা এনে ৫০ শতাংশ জমি চাষ শুরু করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ২১ লাখ টাকা। এখন প্রতি সপ্তাহে যা বিক্রি শুরু হয়েছে, তাতে এ বছরেই আমার খরচ উঠে লাভ দেখতে পারব। সামনের তিন বছরে আশা করছি, আমার এক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।’

অন্যদিকে উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের আরেক ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন কয়েক বছর ধরে চাষ করছেন গ্ল্যাডিয়াসসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসের ভালোবাসা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসের ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন তাঁর ক্ষেতের ফুল শহরের বিভিন্ন দোকানি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় তিনি খুবই আনন্দিত।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমি ফুল চাষ করছি। ফুল চাষে সরকারিভাবে ঠিকঠাকমতো সাহায্য ও সহযোগিতা পাচ্ছি। আমি অন্যান্য চাষের সঙ্গে ফুল চাষ করে দেখলাম যে ফুল চাষ অধিক লাভজনক।’ তিনি আরো বলেন, সারা বছর ফুল চাষ করলেও এই ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এই মাসকে কেন্দ্র করে আমরা ফুলগাছের যত্ন নিচ্ছি বেশি বেশি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে আরো ভালো করতে পারব।’

এদিকে, সামনের বিশেষ দিনগুলোর জন্য ফুলের দোকান ও ফুলচাষিদের সঙ্গে আগেভাগেই যোগাযোগ করছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। ফুলের দোকানগুলোতে তৈরি হয়েছে বাড়তি চাহিদা। তবে তাঁরা চাহিদামতো ফুল দিতে পারছেন না ক্রেতাদের। দাম বেশি দিয়ে কেনায় তাঁদের এখন বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান ফুল দোকানিরা।

ফরিদপুরের সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল বাসার মিয়া বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের বিশেষ দিনগুলোকে টার্গেট করে কৃষক যদি ফুল চাষ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা অধিক লাভবান হবেন। ফুল চাষ একটি লাভজনক চাষ। ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয় বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

এই ফুল চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, তাঁরা যদি সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পান, তাহলে ফরিদপুরে ফুল চাষ সারা দেশের মধ্যে একটি লাভজনক চাষ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে বিশেষ দিনগুলোতে নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশের চাহিদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে ফরিদপুরের ফুল, যা বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।