‘বখাটেদের হাত থেকে বাঁচাতে বিয়ে, শ্বশুরবাড়িতেও বাঁচল না মেয়ে’

Looks like you've blocked notifications!
গতকাল বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত আঁখি বোসের পরিবার। ছবি : এনটিভি

‘বখাটেদের অত্যাচারের মুখে আমার মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বামীর নির্যাতন আর শ্বশুরের কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাদের নির্যাতনে আর আঘাতে মারা গেছে আমার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে।’

এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিলেন নিহত আঁখি বোসের মা জোছনা বসু। তিনি বলেন, ‘আর কোনো মেয়েকে যেন আমার মেয়ের মতো এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বামীর বাড়িতে আঁখি বোসকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হয় বলে দাবি করছে আঁখির পরিবার। যৌতুকের দাবিতে মাঝেমধ্যেই আঁখিকে নির্যাতন করা হতো বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার আঁখির শ্বশুর এস কে বোস, তাঁর স্ত্রী অশোকা বোস ও ছেলে অরূপ কুমার বোসের শাস্তি দাবি করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আঁখি বোসের পরিবার।

এ সময় আঁখির মা জোছনা বসু বলেন, ‘আর কোনো মেয়েকে যেন এভাবে প্রাণ দিতে না হয়। আমি আঁখির শ্বশুর এস কে বোস, তাঁর স্ত্রী অশোকা বোস ও ছেলে অরূপ কুমার বোসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আঁখি বোসের বাবা যশোরের কেশবপুর উপজেলার স্কুলশিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র বসু লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালে তাঁর মেয়ে আঁখিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার এস কে বোসের ছেলে অরূপের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় স্বর্ণ ও নগদ টাকা দেওয়ার পরও অরূপ যৌতুক বাবদ বারবার টাকা চাইত। টাকা দিতে না পারায় আঁখিকে নির্যাতন করা হতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করেন, এমনকি অরূপের বাবা এস কে বোস বিভিন্ন সময়ে তার ছেলের বউ আঁখিকে কুপ্রস্তাব দিত। এতে আপত্তি করায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে আঁখিকে হত্যা করা হয়। বিষয়টি জানাজানির ভয়ে আঁখির লাশ তার কক্ষের সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার কথা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা।

হত্যার পর বাড়ির লোকজন ঘরে তালা ঝুলিয়ে নিজেদের পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে গ্রামবাসী ওই পরিবারের লোকজনকে অবরুদ্ধ করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আঁখির লাশ উদ্ধার করে।

আঁখির শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে আটক করে পুলিশ। পরে আঁখির বাবা গোবিন্দ বসু তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দ বসু আরো জানান, আঁখির গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আঁখির মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখানো হলেও তার দুই পা মেঝেতে পাতানো ছিল। তাঁর নাক দিয়ে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ঝরছিল। গলায় ফাঁসের চিহ্নও মেলেনি। এমনকি তাঁর জিহ্বা ছিল স্বাভাবিক।

বুধবার আঁখির মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে বলে জানান গোবিন্দ বসু। সংবাদ সম্মেলনে আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ সময় আঁখির স্বজন প্রতিমা হালদার, অর্চনা বিশ্বাস, পার্থ বিশ্বাস, প্রতিবেশী গোপাল চন্দ্রসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।