আল মাহমুদের দাফন গ্রামের বাড়িতে
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদের দ্বিতীয় জানাজা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ফটকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার বাদজোহর এই জানাজায় দেশের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেয়।
দুপুরে কবির বড় ছেলে শরিফ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন আল মাহমুদকে আবার মগবাজারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর তাঁকে তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীকাল বাদ যোহর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।’
এর আগে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কবি আল মাহমুদের মরদেহ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একাডেমির মহাপরিচালক হাবিল্লাহ সিরাজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত থাকা কবির মরদেহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখানে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা।
আল মাহমুদ গতকাল শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার পর বার্ধক্যজনিত কারণে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর মগবাজারের বাসায়। আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কবিকে তাঁর মগবাজারের বাসা থেকে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
কবি আল মাহমুদ ভর্তি ছিলেন ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে। নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন কবি আল মাহমুদ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তির পর কবিকে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি ওই হাসপাতালের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কবির নিউমোনিয়া বৃহস্পতিবার থেকে বেড়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে প্রেসার কমে যেতে শুরু করে। তবে ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এরপর রাতে হঠাৎ করে হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন রক্তচাপ কমে যেতে থাকে। এতে মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন না পৌঁছালে মানুষ ক্লিনিক্যালি মারা যায়। কবির বেলাতেও সেটা হয়েছে।
আল মাহমুদ শুধু আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি নন, তিনি একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
কবি আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
সাহিত্যে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কবি। লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬) ইত্যাদি আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।