নির্বাচন দিয়ে জীবন প্রতিস্থাপন করা যায় না : সিইসি

Looks like you've blocked notifications!
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, একটি জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। একটা নির্বাচন দিয়ে একটি জীবন প্রতিস্থাপন করা যায় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক হয়, এতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, এটা ভালোভাবে দেখতে হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনকালে সিইসি এসব কথা বলেন।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, এ দেশের মানুষ অন্যান্য মানুষের চেয়ে বেশি নির্বাচনমুখী, বেশি রকমের ভোটদানমুখী। সেই উৎসব তাদের মধ্যে আছে। সে কারণে তারা গিয়ে ভোট দেন। সুতরাং সেই মালিকের মালিকানা যাতে তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারেন সেই ব্যাপারে আপনারা অবশ্যই সচেতন করবেন। সে ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।

সিইসি বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে। এ দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সারা জীবনব্যাপী যে রকম প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। এ বছরও কিন্তু তেমনিভাবে প্রতিযোগিতামূলক হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে। সেরকম গুরুত্বও বহন করবে। বিগত দিনে অনেক সময় নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে অনেকের জীবনহানী ঘটেছে, অনেকে হয়তো বা আহত হয়েছে- এ রকম কিন্তু ঘটনা ঘটেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এগুলো সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে যেন প্রাণহানী না ঘটে। এগুলো আপনারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। কোনো প্রাণহানী যেন না ঘটে, হতাহত না হয়।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে, আনন্দঘন পরিবেশে, নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন। এটা আমাদের এসব দেশের একটা বৈশিষ্ট্য। সেই নির্বাচনের পরিচালনার দায়িত্ব আপনাদের হাতে। সেদিক দিয়ে কিন্তু আপনাদের আলাদাভাবে আনন্দ এবং গুরুত্ব বহন করার কথা।

সিইসি বলেন, আপনাদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দেওয়ার বা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এ কথা আমি বারবার বলি। কারণ আপনাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে সে দায়িত্ব পালন করা হবে কি হবে না সেটা যদি সন্দেহ করি। তাহলে আর কোথায় যাব আমরা? জাতি কোথায় যাবে? একটা কথা আছে না – ইফ নট ইউ, দেন হু? সে পর্যায়ে আপনারা আছেন। আমি আপনাদের চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই। আপনাদের তারুণ্য আছে, উৎসাহ আছে, উদ্যম আছে, আপনাদের মাঝে কাজ করার স্পৃহা আছে। সেটাকে আমি অত্যন্ত মূল্যায়ন করি এবং গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি। সে জায়গায় আপনারা ব্যর্থ হবেন আমি বিশ্বাস করি না।

নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য আছে, সেটা আমাদের রফিক সাহেব মাননীয় নির্বাচন কমিশনার বলেছেন। হ্যাঁ আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবারই প্রথম রাজনৈতিক মনোনয়নে হওয়ার কথা। এর আগে কখনো হয়নি। কিন্তু সেসব নির্বাচন কি প্রতিযোগিতামূলক হয়নি? কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। প্রত্যেকেই সেখানে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নেয়। এবং প্রত্যেক প্রার্থী, সমর্থক এবং ভোটাররা কিন্তু সে নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখে। আমি মনে করি। আপনারা সেটা করতে পারবেন এবং করবেন।

সিইসি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে সমন্বয়। গতকালকে আমাদের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা হয়েছে। সেখানে র‍্যাবের  মহাপরিচালক একটা কথা বলেছেন। আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, আমাদের যে জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল, সেই নির্বাচনের কারণে অথবা নির্বাচনের সময় অথবা এই নির্বাচনকালীন আমাদের যে কার্যক্রম তার মাধ্যমে একটা বড় অর্জন হয়েছে জাতির। তাঁর মতে এবং আমার মতেও আমি বিশ্বাস করি সেটা। সেটা হলো কি? সমন্বয়। সমন্বয়ের কথাটা এ বছরে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে। তিনি একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি বলেছেন যে, সমন্বয়। এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। সমন্বয় কি? উনি বলেছেন একটা কথা যে, আমরা এত দিনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, এরা একেকটা গ্রুপ একেকটা ত্রাসের মধ্যে থাকতাম। আলাদা আলাদা একেকটা অরবিটের মধ্যে থাকার প্রবণতা ছিল। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনে সেই অরবিট থেকে সব বেরিয়ে এসে শামিল হয়েছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে, সমন্বয়ের মাঠে, সমন্বয়ের অধিক্ষেত্রে।

কে এম নূরুল হুদা আরো বলেন, একটা জাতির দায়িত্ব পালন করার সবাই মিলে যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সবাই মিলে, সবার প্রচেষ্টা, দক্ষতা, সবার অভিজ্ঞতা একটা ভাণ্ডারে এসে জমা হয়েছে এবং সেখান থেকে আপনারা কাজ করেছেন। এটা একটা বড় অর্জন। সেই অর্জনের ধারাবাহিকতা এখনো আছে এবং থাকবে। নির্বাচন কমিশনই কেবল একত্রে সব ধরনের প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্বপালন করে থাকে। আর অন্য কোনো দপ্তর এভাবে সবার একত্রে কাজ করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা মনে করি যে সেই প্রচেষ্টা এবং প্রয়াস সার্থক হয়েছে।

সিইসি বলেন, যারা কাজ করে তাদের প্রতি আমি সব সময় আস্থাশীল। কাজ করতে গিয়ে হয়তো ভুলভ্রান্তি হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রিবহ একটা লোক এ দেশে যারা জীবন শুরু করেছে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে, যাদের মধ্যে অনেকেই বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকেই নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিচালনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। তাদের হাতে নির্বাচন কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না।

দূর-দূরান্ত থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সিইসি বলেন, এনজয় ইউর লাইফ অ্যান্ড টেক ইউর রেসপনসিবিলিটি। দ্যাট ইজ ইমপর্ন্টেন্ট।