কোথাও মিলছে না লাশ, বোন-ভগ্নিপতি-ভাগ্নের খোঁজে ভাই!

Looks like you've blocked notifications!
বোন নাসরিন জাহান, ভগ্নিপতি সালেহ মো. লিপু ও ভাগ্নে আত্তাহির ছবি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আনোয়ার হোসেন রনি। ছবি : এনটিভি

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোন-ভাগ্নে-ভগ্নিপতির সঙ্গে কথা বলেছেন আনোয়ার হোসেন রনি।

পুরান ঢাকার চকবাজারের আশিক টাওয়ারে বোন নাসরিন জাহান (৩২) চাকরি করেন। বোনকে আনতে ভগ্নিপতি সালেহ মো. লিপু (৪০) ভাগ্নে আত্তাহিকে (৮) নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। ১০টা ৩৮ মিনিটে বের হওয়ার পর তিনজনই নিখোঁজ। মুঠোফোন বন্ধ, কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাঁদের। শেষমেশ খুঁজতে খুঁজতে পরিবারের লোকজন চলে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

মর্গে এসেও তাঁদের সন্ধান পাচ্ছেন না স্বজনরা। নাসরিন জাহানের পক্ষে তাঁর মা কোহিনূর বেগম এবং সালেহ মো. লিপুর পক্ষে বাবা মো. লাল মিয়া ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে রক্ত দিয়েছেন। সে সময় কোহিনূর বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আর পারছি না বাবা, আমার সব শেষ। মেয়ে-জামাই আর কলিজার টুকরা নাতিকে হারিয়েছি। আল্লাহ জানে কোথায় আছে। শুধু একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই আমি ওদেরকে, একটু আদর করতে চাই।’

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাসরিন জাহানের ভাই আনোয়ার হোসেন রনি ও সালেহ মো. লিপুর ভাই ইসমাইল হোসেন। রনি তাঁর বোন-দুলাভাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অনেক খুঁজেছি ওদের, কিন্তু পাইনি। তাই ছুটে এসেছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। কিন্তু এখানেও মরদেহ শনাক্ত করতে পারিনি। অনেক লাশ দেখেছি, চিনতে পারছি না কাউকে। এখানে না পাওয়ায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের তথ্যকেন্দ্রে রিপোর্ট করেছি। তাদের ছবি দেখিয়েছে। চেনার মতো সম্ভাব্য সব ধরনের তথ্যও দিয়েছি। কিন্তু মরদেহ দেখে আমরা কেউ চিনতে পারছি না।’

রনি বলেন, ‘আমার বোন-দুলাভাইয়ের সুখের সংসার। আশিক টাওয়ারে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন বোন। কাজ শেষে আত্তাহিকে নিয়ে দুলাভাই গিয়েছিলেন বোনকে আনতে। এর পর থেকে নিখোঁজ ওরা। অনেক খুঁজেছি, পাইনি। বাবা-মা পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এখানে সেখানে। গত পরশু রাতের ঘটনা ঘটার পর থেকে সবার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তখন থেকে শুধু আপা-দুলাভাইকে খুঁজতে রাতে আগুনে পুড়েছিল এমন সবাইকে দেখেছি। কাউকেই পাইনি।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যখন কোথাও পেলাম না, তখন আমার বড় ভাই দুলাভাইয়ের মোবাইল ট্র্যাকিং করেছেন। দুলাভাইয়ের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন ছিল চকবাজারের সেই চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডস্থলে। এরপর আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, তারাও আগুনে পুড়ে গেছেন।’

নিখোঁজ সালেহ মোহাম্মদ লিপুর ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাসা দুই গলি পরেই উর্দু রোডে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ভাই। আমার খালাতো বোন নাসরিনকে ১০ বছর আগে বিয়ে করেন ভাই। ভাই ইগলু আইসক্রিমের ডিলার ও সরবরাহকারী।’

ইসমাইল বলেন, ‘আজ আমার ভাইকে অসময়ে হারাতে হলো। আদরের ভাতিজাকে দেখতে পাচ্ছি না। সেই হাসিটা কোথায় মিলিয়ে গেল। আজ ভাইকে চিনতে আমার ডিএনএ নমুনা দিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে! আর কারো জীবনে যেন এমন দিন না আসে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে সিআইডির একটি টিম। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রোমানা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২১ জনের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ১৬ জনের স্বজনরা মরদেহ নিখোঁজ বলে দাবি করছে। যাদের মরদেহ চেনা যাচ্ছে না, তদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের (বাবা-মা, ভাই) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে মরদেহ নিশ্চিত হয়ে হস্তান্তর করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’