গরম চা-খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন : আতিকুল

Looks like you've blocked notifications!
আজ বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম উত্তরায় নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ভোটারদের গরম চা আর গরম খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আজকে ছুটির দিন, আজকে বৃষ্টির দিন, আমেজের দিন। ভোটের দিনও আজকে। গরম চা খেয়ে, গরম খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করব।’

এ সময় নৌকা মার্কার এই প্রার্থী আরো বলেন, ‘যদি এই নির্বাচনে বিএনপি আসত, তাহলে তা আরো অংশগ্রহণমূলক হতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আতিকুল ইসলাম উত্তরায় নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। এর পরই তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন।

আজ সকাল ৮টা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডেও ভোট গ্রহণ হচ্ছে। কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

গত দুদিনের ধারাবাহিকতায় আজও ভোর থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সকালবেলায় ভোটারদের কিছুটা ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। অনেক কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সামান্য। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার কিছুটা বাড়তে থাকে।

আতিকুল ইসলাম উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নিজের নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘সুন্দর ঢাকা সাজানোর জন্য আমি আপনাদের ভোটের প্রত্যাশী।’  

গত ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘অভিজ্ঞতার’ মূল্যায়ন করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি, বাম দলগুলোসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। ফলে এই নির্বাচন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কোনো উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। 

ভোটের একদিন আগে গতকাল বুধবার এ নিয়ে অস্বস্তিতে থাকার কথাও স্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এতে আমাদের কিছু করার নেই। এটি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়া আমাদের প্রতি অনাস্থা নয়। তবে সব দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।’

আতিকুল ইসলামকেও আজ সকালে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, ‘খেলায় সমান-সমান প্রতিপক্ষ থাকে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেই। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনটা একপেশে হয়ে যাচ্ছে। একজন প্রার্থী হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কী?’

জবাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘আমি এর আগে বিজিএমইএতে নির্বাচন করেছি। সেখানে প্রতিটি নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। অবশ্যই যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতো, যদি আরেকটি দল থাকত, অবশ্যই এই নির্বাচন আরো অংশগ্রহণমূলক হতো, এতে কোনো সন্দেহ নাই।’

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৩৮২ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে লড়াইয়ে আছেন পাঁচজন। দুই সিটিতে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩১০ জন। উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ছয়টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৬৯ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৬ জন, সমসংখ্যক ওয়ার্ডে ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৫ জন। অন্যদিকে ডিএনসিসির ছয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন এবং ডিএসসিসিতে ২৪ জন।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী

ডিএনসিসি উপনির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন—নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি থেকে শাফিন আহমেদ, বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) থেকে শাহিন খান, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নর্থ সাউথ প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিমের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।

ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি, মোট ভোটকেন্দ্র এক হাজার ২৯৫টি এবং ভোটকক্ষ ছয় হাজার ৪৮২টি। এতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। মেয়র পদে পুরো উত্তর সিটিতে নির্বাচন হচ্ছে। আর সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সম্প্রসিারিত ১৮টি ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে।

উত্তর সিটির সম্প্রসারিত ১৮ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ছয় ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৪৩টি এবং ভোটকক্ষ এক হাজার ৪৭২টি। মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৯২ হাজার ৪২০ জন।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি এবং ভোটকক্ষ এক হাজার ২৫২টি। মোট ভোটার চার লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।

ভোটকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুই সিটিতে টহল শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‍্যাব দায়িত্ব পালন করবে। ডিএনসিসিতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ডিএসসিসিতে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া দুই সিটির মধ্যে ডিএনিসিসিতে চার প্লাটুন এবং ডিএসসিসিতে তিন প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

দুই সিটির প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে সাতজন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য থাকবে লাঠি হাতে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জনের মধ্যে ১১ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য থাকবে লাঠি হাতে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সেও সদস্যরা ভোটের দুদিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিনসহ মোট চারদিন মাঠে থাকছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‍্যাব, পুলিশ ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে দুই সিটিতে ২০১৭ সালে ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর গত ২২ জানুয়ারি দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ ডিএনসিসি মেয়র ও দুই সিটির ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।