ভাসান গানে মাতল মেহেরপুর

Looks like you've blocked notifications!
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামে স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের আয়োজনে ভাসানযাত্রা। ছবি : এনটিভি

কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া ভাষান গান দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে মেহেরপুরে। প্রাচীন আমল বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত এই ভাসানযাত্রা এবার পরিশীলিতরূপে মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় বেশ দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। গানের সঙ্গে সঙ্গে এবার সংলাপে এসেছে গদ্যছন্দে।

মনসা ও নাগের জন্ম, দেবতার তুষ্টি, স্বামীভক্তি আর ভালোবাসার কাহিনীই হলো আবহমান বাংলার ভাসান গানের উপজীব্য। জেলার গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামে স্থানীয় যুব সম্প্রদায় প্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গতকাল রোববার রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামের সুজন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা এ গীতিনাট্য পরিবেশন করেন। এতে প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে নারী সেজে পুরুষদের অভিনয় দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। আশপাশের ১০ থেকে ১২টি গ্রামের মানুষ এ ভাসান গান শুনে মুগ্ধ হয়েছে। প্রৌঢ়রা ফিরে গেছেন হয়তো সেই ছেলেবেলায় খালি ক্ষেতের মাঝখানে পাটি পেতে ভাসান গান শোনার দিনগুলোতে।

ভাসান গান পরিবেশন করা সুজন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক সুজন জানান, ভাসান মূলত বেহুলা আর লখীন্দরের গীতনাট্য। সাধারণত ফসল ওঠার পর রাত জেগে এটি পরিবেশন করা হয়। এলাকাভেদে এই গানের নাম আলাদা আলাদা। মেহেরপুর- চুয়াডাঙ্গা এলাকার ভাসান গান রংপুর অঞ্চলে বিষহরির গান নামে পরিচিত। আবার রাজশাহী-নাটোর অঞ্চলে এ গানের নাম পদ্মপুরাণ গান, কুষ্টিয়ায় পদ্মার নাচন, টাঙ্গাইল জেলায় বেহুলার নাচাড়ি ও দিনাজপুর অঞ্চলে কান্দনী বিষহরির গান, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে মনসার টপযাত্রা, বরিশাল অঞ্চলের রয়ানী গান নামে সমধিক পরিচিত।

এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে মেহেরপুরের প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব মনো হালদার জানান, ভাসান একটি ঐতিহ্যবাহী গীতিনাট্য। সারা দেশেই জনপ্রিয় এ গীতিনাট্য মানুষের মনে নির্মল আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি মা মনসা ও নাগের জন্ম ও পূজার প্রচলনের গল্প তুলে ধরে। সেই সঙ্গে বেহুলার স্বামীভক্তির কাহিনী তুলে ধরা হয়। গ্রামীণ সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করতে এ ধরনের আয়োজন আরো করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভাসান গানের দর্শক গাংনীর ঢেপা গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধা ছফেলা খাতুন জানান, ‘সেই উঠতি বয়সে এ গান শুনেছিলাম। রাত জেগে কখনো বাবার সাথে আবার বিয়ের পর স্বামীর সাথে এ গীত শুনেছি। এখন আর কেউ এর আয়োজন করে না। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত আধুনিক সভ্যতার আড়ালে বিলুপ্তির পথে এ গান। ভাসান গানের আয়োজনে মনে হচ্ছে আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে প্রাচীন এ গান।’

ভাসান গানের আয়োজক কমিটির সদস্য রিকা, বাবলু, মান্নাফ, এরফানসহ অনেকেই জানান, এলাকাবাসীর মনে নির্মল আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।