শনিবার আমার মৃত্যু হতে পারত : রোজী

Looks like you've blocked notifications!

‘রাতে ঘুমাতে পারছি না, মনে হয় আমাকে কয়েকজন রাতের অন্ধকারের মধ্যে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক ও মানিসকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শনিবার আমার মৃত্যু হতে পারত, আজ হয়তো আমার তিনদিনের মিলাদ পড়ত সবাই।’ গত শনিবার রাতে ছিনতায়ের কবলে পড়া নিয়ে এভাবেই নিজের মানসিক অবস্থা ব্যাখ্যা করছিলেন অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী।

এনটিভি অনলাইনেক রোজী বলেন, ‘একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের শুটিং শেষ করে গত শনিবার রাতে আমি আশুলিয়া থেকে ফিরছিলাম। আশুলিয়া রোডে কোনো একটি সমস্যা হয়েছিল, যে কারণে পুলিশ আমাদের গাড়ি মিরপুর বেরিবাঁধ দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। বেরিবাঁধের পঞ্চবটী এলাকায় আসার পর বিকট একটা শব্দ হয়। আমার মনে হয়েছে গাড়ির কোনো অংশ বোধ হয় খুলে গেছে। তখন আমার ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে দেখছিল কী হয়েছে। আমিও তার সাথে গাড়ি থেকে নেমে দেখার চেষ্টা করি কী হয়েছে। এমন সময় চার-পাঁচজন অস্ত্রধারী আমার হাত ধরে টেনে হিচড়ে নিচে নামিয়ে নেয়। আমার গলায় রামদা ধরে সব টাকা পয়সা দিয়ে দিতে বলে। আমি আমার হাতের দুটি হীরার আংটি দিয়ে দেই, সাথে কানের দুল। তবে গলার দিকে তারা খেয়াল করেনি। আরেকটি আংটি ছিল আমার হাতে যেটা ইমিটেশনের, অনেক আগে পরেছিলাম আংটিটি। সেটা খুলতে পারছিলাম না। এক সময় আমার মনে হলো আমার আঙ্গুল ভেঙে ফেলবে। অনেক কষ্ট করে আমি সেই আংটিটিও খুলে দেই। এরই মধ্যে দুজন আমার ড্রাইভারকে মেরে তাঁর মোবাইল মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আরেকজন গাড়ির ভেতর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে যায়।’

টহল পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রোজী বলেন, ‘চোখের পলকে ঘটে গেলোসব। ঠিক এক মিনিটের মধ্যে একটি পুলিশের গাড়ি আসে। আমার মনে হয় জীবন ফিরে পেলাম। তবে তাদের আচরণে অনেক কষ্ট পেয়েছি। কোন দিক দিয়ে লোকগুলো গেছে, তা দেখিয়ে দেই পুলিশকে। আমি বারবার বলছিলাম, আপনারা নিচে নামলেই লোকগুলোকে ধরতে পারবেন। তারা নিচে না নেমে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখছিল কাউকে দেখা যায় কি না। আর আমাদের বলে নিচে কাঁদা, এখানে নামব কীভাবে? তারা আরো বলে, এখানে প্রায়ই এমন হয়, কিছুদিন আগে নাকি একজন আহতও হয়েছে। আমার নাকি জীবন বেঁচে গেছে, সেটাই বড় বিষয়।’

রোজী আরো বলেন, ‘হতাশ হয়ে দিয়াবাড়ি দিয়ে যাওয়ার পথে একজন সার্জেন্টকে পাই, উনাকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে বলেনওই এলাকা রূপনগর থানার আন্ডারে। এই বিষয়ে তিনি সাহায্য করতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন, বেরিবাঁধ এমন একটি রাস্তা যেখান দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি যায়। সেই রাস্তায় কোনো লাইট নেই, একেবারেই অন্ধকার। বারবার এমন ঘটনা ঘটে জানার পরও পুলিশ কেন সতর্ক থাকবে না।’

রূপনগর থানার ওসি শাহ আলমকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোজী বলেন, ‘তবে আমি রূপনগর থানার ওসির ব্যবহারে তুষ্ট হয়েছি। তিনি অনেক ভালো মানুষ। তিনি চেষ্টা করেছেন আসামীদের ধরার জন্য। এর আগেও তিনি এই আসামিদের ধরেছিলেন, তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে লোকগুলো আবারও ছিনতাই শুরু করে। আমি মামলা করেছি রূপনগর থানায়। থানায় ছবি দেখে আসামীদেরও দেখিয়েছি। এখন দেখি পুলিশ কী করে।’   

রূপনগর থানায় রোজী সিদ্দিকী মামলা করতে গিয়ে সুমন মিয়া (২৭), মো. সোহেল (২৪) ও রাজন খান (২৭) নামের তিনজনকে শনাক্ত করেন। তবে তাদের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন, যাকে তিনি শনাক্ত করতে পারেননি।

রূপনগর থানার ওসি শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসামীদের এর আগেও আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারা জামিনে বের হয়ে যায়। তাদের আগের ঠিকানায় আমরা গিয়েছি, কিন্তু সেখানে আমরা পাইনি। আরো কয়েকটি জায়গায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’