আইভীর বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ নারায়াণগঞ্জ’। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার কাছে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদ বাদল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠনটি শামীম ওসমানের সমর্থকগোষ্ঠীর সংগঠন বলে পরিচিত।
পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘…আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, নারায়ণগঞ্জে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেই একটি জনবিচ্ছিন্ন শ্রেণি ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারকে লক্ষ করে মাঠে নামে এবং বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করে। সংবিধানের বাহক সেজে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের সাথে আঁতাত করা, ক্ষমতার জন্য লালায়িত কিছু বড় বড় ডক্টর সাহেবদের প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন রাজধানী থেকে তথাকথিত কিছু সুশীল নারায়ণগঞ্জে আসছেন। তারা একই সাথে আপনার বর্তমান সরকারের কুৎসা রটনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন।’
‘পরিতাপ হয়, ক্ষোভ হয়, যখন দেখি যার আহ্বান ও সমর্থনে এসব সুশীল আসেন, তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করলাম, গত ৬ মার্চ আইভী জনসম্মুখে বললেন, নারায়ণগঞ্জে আজ পর্যন্ত যত খুন হয়েছে সেসব ওসমান পরিবারের দ্বারা হয়েছে। আমরা স্তম্ভিত হলাম।’
বিচার চলাকালীন কোনো মামলা নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত উল্লেখ করে আইভীর প্রতি নির্দেশ করে স্মারকলিপিতে আরো লেখা হয়, ‘আমরা অবাক হলাম যখন শুনলাম মেয়র আইভী বলছেন, ‘সাগর-রুনীর ব্যাপারে আমরা অনেক কিছু জানি। অনেক কিছু জড়িত, তনু হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, সেটাও জানি কারা জড়িত।’ শুধু তাই নয়, আইভীর ভাড়া করে আনা সুশীল ও তার সাথে থাকা জনবিচ্ছিন্ন গুটি কয়েক লোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নিয়ে যে সকল মিথ্যাচার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে তাতে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।’ এরপর সাগর-রুনী বা তনু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মেয়র আইভী কী জানেন, জানলে তা না বলে নীরব থাকেন কেন, সাংবাদিকদের উদ্দেশে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে অভিযোগ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর মাওলানা মইনুদ্দিন গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে জবানবন্দি দেন, তাতে আইভীর সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার কথা জানা যায়। ওই জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলা হয়, বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে বর্তমান সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত আইভীকে জামায়াত পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিকভাবেও জামায়াতের সঙ্গে আইভির সুসম্পর্ক আছে। প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে থেকেই আইভীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জবানবন্দির বরাতে উল্লেখ করা হয়। আইভী জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগ বলে মন্তব্য করা হয় স্মারকলিপিতে।
পরিশেষে স্মারকলিপিতে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও শান্তির পাশাপাশি, উল্লেখিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
স্মারকলিপিটির সঙ্গে আইভীর বিভিন্ন বক্তব্যের সফট কপি সংবলিত একটি পেনড্রাইভও প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ সকাল ১১টার দিকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমার কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আমি স্মারকলিপিতে দেখেছি সচেতন নাগরিক সমাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অ্যাড্রেস করে এই স্মারকলিপিটি লিখেছেন। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, প্রশাসনিক পন্থায় প্রধানমন্ত্রীর নিকট এটা পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্মারকলিপির সঙ্গে একটি পেনড্রাইভও দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত সফট কপিটা পেনড্রাইভে দেওয়া হয়েছে।’