বাঘাইছড়ির হামলা ধারণার বাইরে ছিল : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বাঘাইছড়িতে এমন সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। তিনি মনে করেন, পার্বত্য জেলাগুলোর আঞ্চলিক সমস্যার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সিইসি একথা জানান।
গত সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাতজন নিহত ও ২৪ জন আহত হন।
সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘কমিশন রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। জীবনের মূল্য অর্থিক ক্ষতিপূরণে হয় না। কমিশনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে এবং আহতদের অবস্থা অনুযায়ী আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।’
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘ঘটনার সময়ে বিজিবি সশস্ত্রভাবে দায়িত্বে ছিল। এগুলো চোরাগোপ্তা হামলা, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক হিসাবের মধ্যে থাকে না। সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সারাদিন ভোটে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে পারেনি। সার্বক্ষণিক টহলের কারণে তারা নির্বাচন ব্যাহত করতে পারেনি।’
সিইসি বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আর ঘটনার সময় বিজিবি ছিল, পেছনের গাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ ছিল। সেখানে তারা আক্রমণ করে। বিজিবির গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ছিল, ফলে একটু দূরে ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলের সরু রাস্তায় ঘুরে আসাও সম্ভব নয়। তারপরও এগুলো অতর্কিত হামলা। পরিকল্পিত এসব হামলা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ফলে এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে কাউন্টার হামলা করা সম্ভব না। তবে পরে সামগ্রিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি ছিল না।’
কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ফলাফলসহ ফেরার পথে পাহাড়ের উপর থেকে দুষ্কৃতকারীদের অতর্কিত গুলিবর্ষণে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাতজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে হামলা কবলিতদের দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছে।’
সিইসি বলেন, ‘কমিশন সবসময় তাদের (নিহত এবং আহত) পরিবারের পাশে থাকবে। পার্বত্য এলাকায় ভোটের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ভোটের সময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো থাকে না। সারাদেশে উপজেলা ভোটে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সহায়তায় দুটি হেলিকপ্টারযোগে আহতদের রাতেই চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে কয়েকজনকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সাতজন ঢাকার সামরিক হাসপাতালে চিকিৎধীন আছেন।’
হামলা পরবর্তী আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন সিইসি। ভোটের সময় পার্বত্যাঞ্চলে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘যাতায়াত ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকায় ভোটে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করা হয়। হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। কমিশন সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। ঘটনার দিন বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সামরিক ও বিমান বাহিনীর সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।’
সিইসি বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা একটি ব্যাপক এরিয়া। কোথায় কী হবে তা হিসাব করা যায় না। বিজিবিই নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট ছিল। সবসময়ই নির্বাচনের সময় গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোট বর্জন করতেই পারে। কিন্তু বর্জনের পর এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে, তা ধারণা করা যায় না। তবে এই দায় কার সেটি বলা যায় না। বাঘাইছড়ির ঘটনায় কাউকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে আঞ্চলিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে এই ঘটনা। আঞ্চলিক অনেক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তারা ভোট বর্জনও করেছে। এর আগে কোন্দলের কারণে অনেক খুনাখুনি হয়েছে, অনেকের জীবন গেছে। একটা সময় দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা করা হতো। এটি তেমনই একটি অঞ্চল।’
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে ২৩ থেকে ২৫ তারিখ রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশের কথা জানান সিইসি। এ সময় ভোটার উপস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘যারা আসবে তারা ভোট দেবে, যারা আসবে না তারা ভোট দেবে না। এতে তো আমাদের কিছু করার নেই।’