একইভাবে শেষ সন্তানটিকেও হারালেন ইতালিপ্রবাসী
চার বছর আগে আদরের শিশু মেয়েকে (৫) হারিয়েছিলেন ইতালিপ্রবাসী সঞ্জয় দেবনাথ। লাশ পেয়েছিলেন বাড়ির পাশের পুকুরে। একইভাবে এবার শেষ সন্তান ছেলে সুজয় দেবনাথকেও (৫) চিরদিনের মতো হারালেন তিনি।
নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে সুজয় দেবনাথের অর্ধগলিত লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু সুজয় মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামের ইতালিপ্রবাসী সঞ্জয় দেবনাথের ছেলে। গত সোমবার দুপুরে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সুজয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রবাসী সঞ্জয় দেবনাথের সম্পদের লোভে তাঁর ছোট ভাই ও ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এর আগে তারা সুজয়ের বোনকেও পানিতে ফেলে হত্যা করে।
মানিকগঞ্জ সদরের ভারাড়িয়া ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামে শিশু সুজয়কে হত্যার অভিযোগে তার কাকার পরিবারের সদস্যদের আটক করে পুলিশ। ছবি : এনটিভি
এ ঘটনায় উত্তেজিত গ্রামবাসী শিশুটির চাচ-চাচিকে মারধর করে এবং বাড়িতে হামলা করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা শুরু করলে গ্রামবাসী পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইতালি থাকেন সঞ্জয় দেবনাথ। তিনি বাড়িতে ছুটিতে আসেন এবং প্রায় ২০ দিন আগে আবার ইতালি চলে যান। গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সুজয়কে বাড়িতে রেখে মা বাসন্তী দেবনাথ পুকুরে গোসল করতে যান। গোসল সেরে বাড়িতে এসে সুজয়কে না পেয়ে তিনি বাড়ির আশপাশ এবং গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। কোথাও শিশুটির খোঁজ না পেয়ে ওই দিনই চাচা রঞ্জিত দেবনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এরপর আজ সকালে বাড়ির কাছে একটি পুকুরে সুজয়ের লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী। এরপর গ্রামবাসী শিশুটির চাচা রঞ্জিতের বাড়িতে হামলা করে। এতে রঞ্জিত, তাঁর স্ত্রী নিপা দেবনাথ ও মা মায়া রানি দেবনাথ আহত হন।
খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটি লাশ উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ আহতদের হেফাজতে নেয়। উত্তেজিত গ্রামবাসী অভিযুক্তদের ওপর আবার হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে গ্রামবাসী। এ সময় গ্রামবাসী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মানিকগঞ্জ সদরের ভারাড়িয়া ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামে শিশু সুজয়কে পুকুরে ফেলে হত্যার অভিযোগে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি
পুলিশ শিশুটির কাকা ও দাদিকে থানায় নিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় দাদি মায়া রানিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রায় চার বছর আগে নিহত শিশু সুজয়ের বোনকেও পানিতে ফেলে হত্যা করে কাকা রঞ্জিতের পরিবারের সদস্যরা। সম্পদের লোভে তারা সুজয়কেও হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। এ কারণে গ্রামের অধিকাংশ লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হানিফ সরকার বলেন, সঠিক সময় পুলিশ না গেলে যাদের বিরুদ্ধে সুজয়কে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে উত্তেজিত লোকজনের কারণে তাদের প্রাণনাশ হতে পারত। উত্তেজিত লোকজন নিহতের চাচা রঞ্জিতের বাড়িঘরে যেমন হামলা করেছে তেমনি পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশুর চাচা রঞ্জিত দেবনাথ, কাকি নিপা দেবনাথ, দাদি মায়া রানি দেবনাথ, চাচাতো ভাই নিলয় দেবনাথ ও চাচাতো বোন রিতু দেবনাথকে আটক করা হয়েছে।
শিশুটিকে হত্যার অভিযোগে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হবে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশকে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে অপর মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান হানিফ সরকার।